নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
মধুরেণ সমাপয়েৎ! বাঙালি মিষ্টির চিরকেলে আঁতুড়ঘরে ক্যাডবেরির অভিঘাতে কয়েক মাসের জটিল নিরীক্ষার পরে এ বার তৃপ্তির ঢেঁকুর-পর্ব।
বাঁধা গতের বাইরে অন্য স্বাদের মিষ্টি খেয়ে প্রথমে দেদার ভোটাভুটি। পরে ন’টি হেভিওয়েট মিষ্টি প্রতিষ্ঠানের যুদ্ধের আঁচ ছড়াল ঘরে ঘরে। বাঙালি মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের সৃষ্টিশীলতা নতুন করে উস্কে দেওয়ায় ঘরে-বাইরে ব্যস্ত একেলে বঙ্গনারীও প্রতিভায় শান দিলেন। ‘ক্যাডবেরি মিষ্টি সেরা সৃষ্টি’ প্রতিযোগিতায় বাঙালি মিষ্টি ও ক্যাডবেরির বিয়ের সূত্রে বেশ কিছু নতুন মিষ্টি পেয়েছে শহর। নকুড়ের চকোলেট শিঙাড়া, বলরামের ক্যাডবেরি জেলাতো, হিন্দুস্থান সুইটসের চকো ফিউশন, যাদবের চকোলেট বল বা কেসি দাশের চকোলেট ছানার পায়েসের মতো বেশ কিছু সৃষ্টিই বিশেষ নজর কেড়েছে। নতুন সৃষ্টির প্রস্তুতিতে রীতিমতো মাথা খাটিয়ে বাছাই কারিগরদের নিয়ে আলাদা করে ‘টিম ক্যাডবেরি মিষ্টি’ নিয়ে নেমেছিলেন মিষ্টি-শিল্পীরা। নানা ভাবে চলেছে এক্সপেরিমেন্ট। |
বাঙালি গিন্নিও একদা নানা ধরনের মিষ্টি সৃষ্টিতে তুখোড় ছিলেন। একেলে মেয়েরাও যে পিছিয়ে নেই, এই প্রতিযোগিতা সেটাও দেখাল। আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য টেলিগ্রাফের আহ্বানে পাঠানো কয়েকশো রেসিপি-র মধ্যে বাছাই করে ১০ জন মহিলাকে ডেকে তাঁদের তৈরি মিষ্টির বিচার করেন মিষ্টির দোকানের কর্তারা। তাতেই প্রথম তিনটি স্থান পেয়েছেন হাজরার সোমা সান্যাল, আলিপুরের রচনা জয়সোয়াল ও সল্টলেকের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী ভট্টাচার্য।
সোমা-রচনারা প্রধানত পত্র-পত্রিকা বা টিভি-র রেসিপি ঘেঁটেই রান্নার নেশায় মাতেন। সোমার কথায়, “এত দিন বাড়ির সকলের মুখ বদলের কথা ভেবে নানা রকম রাঁধতাম। এই প্রতিযোগিতায় আলাদা আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি।”
ক্যাডবেরি মিষ্টি নিয়ে কয়েক মাস চর্চার পরে বাংলার মিষ্টিও সৃষ্টিশীলতার এক অন্য মাত্রা পেল। আমনাগরিক ও বিচারকদের ভোট মিলিয়ে যাঁরা সেরা হলেন, সেই ‘বলরাম মল্লিক’-এর দোকানের কর্তা সুদীপ মল্লিক জোর গলায় বলছেন, “ক্যাডবেরির মতো গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগে আমরা দারুণ খুশি। কিন্তু বাঙালির মিষ্টিও ক্যাডবেরির স্বাদের থেকে খাটো নয়, এটাই প্রমাণ হল।” ক্যাডবেরি গোষ্ঠীর কর্তারাও বাংলার মিষ্টি তথা বাঙালি সংস্কৃতির শরিক হতে পেরে গর্বিত।
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, চলচ্চিত্রকার সন্দীপ রায় ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ রাখীপূর্ণিমা দাশগুপ্তেরা ছিলেন এই প্রতিযোগিতার বিচারক। ক্যাডবেরি ও বাঙালির মিষ্টি দু’টি ভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধনে তাঁরাও খুশি। রাখীপূর্ণিমার কথায়, “চকোলেট শেফ ও বাঙালি মিষ্টির শিল্পী দু’পক্ষের জন্যই এই যোগাযোগ বহু নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।” আপাতত মিষ্টিযুদ্ধের সন্ধি উপলক্ষে আজ ও কাল, শনি-রবিবার সল্টলেকের সিটি সেন্টারে মিষ্টির মেলা। সেখানেও মিলবে প্রাণপণে নতুন ক্যাডবেরি মিষ্টি চাখার সুযোগ। |