দিদির প্রেমিককে পিটিয়ে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ধূপগুড়ি |
দিদির সামনেই তাঁর প্রেমিককে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। বুধবার রাত ১১টা নাগাদ ধূপগুড়ি থানার সাঁকোয়াঝোরা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঠাকুরপাট গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। চোখের সামনে প্রেমিককে খুন হতে দেখে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তাঁর প্রেমিকাও। তাঁকে প্রথমে ধূপগুড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অভিযুক্ত ওই যুবক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। পুলিশ তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে।
পুলিশ জানায়, নিহতের নাম আশু দাস (২৫)। তিনি গ্রামেরই বাসিন্দা। বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্মী আশু ও তরুণীটি একসঙ্গে স্কুলে পড়তেন। সেই সুবাদেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনে একে অন্যের বাড়িতেও নিয়মিত যেতেন। তরুণীটি বর্তমানে রবীন্দ্র মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাঁর বাবা অসমে সেনাবাহিনীতে কর্মরত। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি তরুণীটির মামা-মামি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান।
সেই কারণে তরুণীর মা তাঁর বাপের বাড়িতে যান। ছোট ভাই দেবজিৎ ও বৃদ্ধার শাশুড়ি বাড়িতে ছিলেন। ওই রাতে দেবজিৎ পাড়ার ক্লাবে আইপিএল ম্যাচ দেখতে যান। আশুর বাড়ির লোকজনদের অভিযোগ, সেই সময়ে তরুণীটি ফোন করে আশুকে বাড়িতে ডেকে নেন। কিন্তু, ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক আগেই দেবজিৎ বাড়ি ফেরেন। বাড়িতে ঢুকে দিদির ঘরে আশুকে দেখতে পেয়ে তিনি একটি লাঠি নিয়ে তেড়ে যান। তার পরে দিদির সামনে আশুর মাথায় ও ঘাড়ে আঘাত করেন বলে অভিযোগ। আশু রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে সে দৃশ্য দেখে তরুণীটি অজ্ঞান হয়ে যান। ওই সময়ে দেবজিৎ প্রতিবেশী যুবক অর্জুন দাসকে ডেকে ‘আশুকে মেরেছি’ বলে উধাও হয়ে যান। অর্জুনবাবুর দাবি, “হঠাৎ রাতে বাড়িতে এসে হাজির হয় দেবজিৎ। আশুকে মেরেছি বলে ও উধাও হয়ে যায়। ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি রক্তে মেঝে ভেসে গিয়েছে। আশু পড়ে রয়েছে। আমিও জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। আর কিছু জানি না।” |
পুলিশ অর্জুনকেও জেরা করবে বলে জানিয়েছে। আশুর বাবা পেশায় সবজি ব্যবসায়ী তারাপদবাবু বলেন, “তিন ছেলের মধ্যে বড় আশু। বুধবার ভোরে আমাদের বাড়িতে এসে রুটি খেয়েছে ছেলের ওই বান্ধবী। রাতে সে ছেলেকে ডেকে নিয়ে যায়। সবই পুলিশকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি। লিখিত অভিযোগও জমা দেব।” এই ঘটনায় হতভম্ব ওই তরুণীর মা মায়া রায় সহ বাড়ির সকলেই। মায়া দেবী বলেন, “ভাই ও তাঁর স্ত্রী পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে। তাই ময়নাগুড়ি গিয়েছিলাম। মেয়ের সঙ্গে আশুর কী সম্পর্ক ছিল জানি না। রাতে বাড়ি ফিরে দেখি ছেলে বাড়িতে নেই। মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রয়েছে। কী ভাবে কী যে হল! ছেলেটাও যে কোথায় জানি না।” পঞ্চায়েত সদস্য হরেন পাল জানান, দেবজিৎ আশুকে মেরে পালিয়েছে বলে তাঁরাও শুনেছেন। তিনি বলেন, “আশু ও ওই তরুণীর মধ্যে প্রেম ছিল। হয়তো অত রাতে দিদির সঙ্গে আশুকে দেখে দেবজিৎ মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।” ধূপগুড়ি থানার আইসি সুভাষ প্রধান বলেন, “দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। যে যুবক খুন করেছে বলে শোনা যাচ্ছে, তাঁর খোঁজ মেলেনি।” নিহত আশুর শোকার্ত পরিবার। |