কিছু দিন আগেই পুলিশের ‘অকর্মণ্যতা’র জন্য ভরা এজলাসে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে দাঁড় করিয়ে তুলোধোনা করেছিল হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার অন্য একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপেন সেন বলেন, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তা নিজের এক্তিয়ার সম্পর্কেই সচেতন নন। তিনি এক্তিয়ার ছাড়াচ্ছেন। তবে পুলিশ কমিশনারের মতো কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তাকে অবশ্য এ দিন হাইকোর্টে হাজির থাকতে হয়নি।
বিতর্কের শুরু একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন নিয়ে কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তার নির্দেশকে কেন্দ্র করে। ওই অধিকর্তার দফতরের লোকজন আদৌ পরিদর্শনে যেতে পারেন কি না, সেই ব্যাপারে মামলা ঠুকে দিয়েছে ক্যালকাটা ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট। সেই মামলাতেই কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তার এক্তিয়ার নিয়ে এ দিন কটাক্ষ করেন বিচারপতি।
ওই কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তরফে আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, এটি অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল অফ টেকনিক্যাল এডুকেশন বা এআইসিটিই-র অনুমোদিত একটি বেসরকারি কলেজ। প্রতিষ্ঠানটি রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন। কিন্তু রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তা হঠাৎ ওই প্রতিষ্ঠানকে চিঠি লিখে জানান, তাঁর দফতরের কয়েক জন অফিসার কলেজ পরিদর্শনে যাবেন। কারণ ওই কলেজের বিরুদ্ধে কিছু আর্থিক ও প্রশাসনিক অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগগুলি ঠিক কী ধরনের, কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তার কাছে তা জানতে চান কলেজ-কর্তৃপক্ষ। অধিকর্তা ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় কলেজকে আবার একটি চিঠি দিয়ে জানান, তাঁর দফতরের অফিসারেরা ২ এপ্রিল পরিদর্শনে যাবেন। তখন তাঁরাই জানিয়ে দেবেন, কী কী অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই ওই কলেজের তরফে হাইকোর্টে মামলা করে জানানো হয়, অধিকর্তার দফতরের অফিসারেরা সেখানে পরিদর্শনে যেতেই পারেন না।
মামলার শুনানির সময় রাজ্যের পক্ষে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সওয়ালে বলেন, সরকারের এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক পাঠানোর অধিকার আছে। আইনেই সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে। ওই কলেজের পক্ষে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, এআইসিটিই-র আইনে তাদের অধীন কোনও প্রতিষ্ঠানে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সেখানকার কাজকর্ম দেখার দায়িত্বে রয়েছে প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকার সেখানে নাক গলাতেই পারে না। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আইনজীবী নন্দিনী মিত্রের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে না।
সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে বিচারপতি জানান, কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তা তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে পা রেখেছেন। ৩ মে পর্যন্ত কারিগরি শিক্ষা অধিকর্তার ওই নির্দেশ স্থগিত করে দেন বিচারপতি। নির্দেশে বলা হয়, এক সপ্তাহ অর্থাৎ ১২ এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, কেন এই ধরনের চিঠি পাঠানো হল। ২৫ এপ্রিল এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি হবে। |