সহবাগদের আইপিএলে সূর্যোদয় ঘটাতে
টিম মিটিংয়ে সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্টজয়ী
তেরো বছরের অর্জুন বাজপেয়ী।
নামটা কারও অজানা থাকার কথা নয়। বিশ্বের সবথেকে কম বয়সি হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা ভারতীয়। ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচের জন্য সেই বিস্ময়-কিশোরকেই টিম মিটিংয়ের চমক হিসেবে আমদানি করলেন বীরেন্দ্র সহবাগ-রা। কলকাতা নাইট রাইডার্স যেমন মনোজ তিওয়ারি-সহ কয়েক জন ক্রিকেটারকে পাঠাল তাদের মনোবিদ রুডি ওয়েবস্টারের ক্লাসে, তেমন সহবাগ, ইরফান পাঠান-রা বসে পড়লেন খুদে অভিযাত্রীর সামনে। আর নিজের পর্বতারোহণের কাহিনি, এভারেস্ট অভিযানের শিহরণ জাগানো সব অভিজ্ঞতার ঘটনা শুনিয়ে সহবাগদের মনোবল বাড়িয়ে রাখল অর্জুন।
রাতে মর্নি মর্কেলের আক্রমণাত্মক বোলিং বা ইরফান পাঠানের উত্তেজক ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, অর্জুনের বক্তব্য যথেষ্ট কাজে দিয়েছে। ম্যাচের সেরা ইরফান পাঠানও আনন্দবাজারকে বলে গেলেন, “অর্জুনের কথা আগে অনেক শুনেছি। এই প্রথম কাছ থেকে দেখলাম। ১৬ বছর বয়সে ওর এই কীর্তি অকল্পনীয়। ওর বক্তব্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।”
অর্জুন বাজপেয়ী।
অর্জুন থাকে দিল্লির নয়ডায়। ২২ মে, ২০১০ বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ পর্বতারোহী হিসেবে এভারেস্টে তেরঙ্গা উড়িয়ে দেয় সে। ইতিহাস সৃষ্টি করে দিল্লি ফেরার পর তাকে নিয়ে এমন হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল যা বোধ হয় শুধু সহবাগ পাকিস্তানকে হারিয়ে ফিরলে দেখা যায়। মাত্র সতেরো বছরের হয়েও দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের টিম মিটিংয়ে দাঁড়িয়ে সে বলে গেল, “শীর্ষে আরোহণের রাস্তাটা ঝড়-ঝঞ্ঝায় ভর্তি থাকবে। এটাই নিয়ম। ঝড়ের সামনে পড়তে হবে। পা পিছলে যাবে বার বার। রক্তাক্ত হতে হবে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসবে। মাঝে মধ্যে সব অন্ধকার দেখাবে। মনে হবে জীবনের এখানেই বোধ হয় শেষ। এভারেস্টে ওঠার সময় আমাকেও একই রকম প্রতিকূলতার সামনে পড়তে হয়েছিল। তবু এগিয়ে যেতে হবে। পড়তে পড়তে উঠে দাঁড়াতে হবে।”
আইপিএলের এই নিয়ে পঞ্চম বছর। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস কোনও বারই তেমন কিছু করে দেখাতে পারেনি। এ বার তাই বিস্ময়-কিশোরের ভোকাল টনিক দিয়ে তারা আইপিএল যাত্রা শুরু করানোর কথা ভেবেছে। আইপিএল যত এগোবে, অর্জুনের মতো আরও কয়েক জন দুঃসাহসী অভিযাত্রীকে আনার পরিকল্পনা আছে ডেয়ারডেভিলস টিম ম্যানেজমেন্টের। কখনও আলট্রা-ম্যারাথন রানার অরুণ ভরদ্বাজ। কখনও ট্রায়াথলিট অনুরাধা বৈদ্যনাথন। এ দিন অর্জুন গত চার বারের ব্যর্থতা ভুলে সহবাগদের সামনের দিকে তাকাতে বলে গেল। বলল, “শৃঙ্গ জয় করতে গেলে ব্যর্থতা সঙ্গী হবে। সেই সময় সারাক্ষণ নিজেকে বলে যেতে হবে, আমি পারব। আমি পারব। ঝড়-ঝঞ্ঝা-প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর নানা বাধাবিঘ্ন জয় করে আমি যদি ঊনত্রিশ হাজার তিরিশ ফিট পর্যন্ত উঠতে পারি তা হলে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসও পারবে আইপিএলের শৃঙ্গ জয় করতে!”
শাহরুখ খান যখন বাইপাসের ধারের টিম হোটেলে চেক-ইন করলেন আর লবিতে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল, তখন অর্জুন নিজেকে নিঃশব্দে তৈরি করছিলেন সহবাগদের টিম মিটিংয়ে কী বক্তব্য রাখবেন তার জন্য। পাহাড়ি একটা আদল প্রথমেই দ্রষ্টব্য। উদ্দীপিত চাহনি। কিন্তু একই সঙ্গে কী ভীষণ স্থিতধী! দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের জার্সিতে তাকে দেখে মনেই হবে না অন্য কোনও জগতের ছেলে। বরং মনে হবে উত্তর ভারতের কোনও প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন ক্রিকেটার। আইপিএলের রংবাহারি মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে উঠে আসতে চাইছে। কিন্তু তার কাহিনি শোনার পর ক্রিকেটীয় শৃঙ্গ জয়কেও অনেক ছোট মনে হবে।
“দশ বছর বয়স থেকে আমি পর্বতারোহণে নাম লিখিয়েছি। বাবাকে রাজি করানো খুব কঠিন ছিল। পুণেতে আমার জীবনের প্রথম ট্রেক। ঘণ্টা দু’য়েকের ট্রেক ছিল। সেটাতে আমি ভাল করেছি দেখে অনেকে গিয়ে বাবাকে বলে যে, আমাকে পর্বতারোহণে দেওয়া ঠিক হবে। তার পর প্রফেশনাল কোর্স করে নিজেকে তৈরি করি। ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল এভারেস্টে উঠব।” বাইপাসের ধারে টিম হোটেলে দাঁড়িয়ে যখন বলছিল অর্জুন, তখন মনে হচ্ছিল দু’দল মিলিয়ে অনেক তারকা ক্রিকেটার এখানে উপস্থিত থাকতে পারে। কিন্তু মহাভারতের অর্জুনের মতোই সবাইকে ছাপিয়ে সেরা চরিত্র। এভারেস্ট জয়ের প্রথম অনুভূতি কী ছিল? অর্জুন বলল, “যখন জাতীয় পতাকা পুঁতে দিলাম এভারেস্টের শৃঙ্গে...উফ্! বলে বোঝাতে পারব না সেই অনুভূতি কেমন ছিল। ভীষণ গর্বিত মনে হচ্ছিল নিজেকে।” এর পরেই বেরিয়ে আসে তার কিশোর বয়সের ছেলেমানুষি। “কিন্তু সবথেকে আনন্দ লেগেছিল এভারেস্টের শীর্ষ থেকে সূর্যোদয় দেখতে। অত কাছ থেকে সূর্যোদয় কখনও দেখিনি। সে দিন আবহাওয়াটাও দারুণ ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমাদের এক ফুটের মধ্যে সূর্যোদয় হচ্ছে!”
অর্জুনের দুঃসাহসিক কাহিনিতে উজ্জীবিত হয়ে সহবাগরা কি পারবেন তাঁদের আইপিএল সূর্যোদয় ঘটাতে? ২৭ মে ফাইনালের আগে জানার উপায় নেই। অর্জুন দু’টো উপদেশ দিয়েছে সেটা অবশ্য জানা গেল। মাথা ঠান্ডা রাখো আর অভিযানটা উপভোগ করো!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.