ইডেনে ইরফান-ঝড়ে উড়ে গেল নাইটরা
দ্বোধনী ম্যাচ যখন, চাই ধামাকাদার শুরু। ঘরের মাঠে যখন শুরু অভিযান, চাই দুটো পয়েন্ট। টিম মালিকের আমন্ত্রণে কেকেআরের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও যখন প্রথম বার আইপিএলের আসরে, চাই উপযুক্ত অভ্যর্থনা। এই তিনটে ‘চাই’-এর উত্তরে প্রাথমিক প্রাপ্তি বলতে শুধুই শূন্যতা। রাত দশটা পর্যন্ত ইডেনে ছিল একটাই ক্যাচলাইন: আইপিএল ফাইভ ক ঝড় বো বৃষ্টি ০!
মাঝরাতে ম্যাচ শেষেও পয়েন্ট নয়, শূন্য হাতেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে নাইটদের।
বৃষ্টি থেমে যখন ভিড়ে ঠাসা ইডেনে রাত সাড়ে দশটায় ম্যাচ শুরু, কেকেআরের ‘কাহানি’ বলতে সেই হারাকিরি। সামান্য ব্যতিক্রম দুই বঙ্গসন্তান। কালিস বা ম্যাকালাম নয়, ইডেনে ‘চক দে কেকেআর’ মুহূর্ত ক্ষণিকের জন্য ঢুকে পড়েছিল লক্ষ্মী ও দেবব্রতের ব্যাটে। মিড উইকেটের উপর দিয়ে লক্ষ্মীর যে ছয়টা গ্যালারির প্রায় কুড়ি-পঁচিশ হাত ভিতরে গিয়ে পড়ল, ওটা ছয়ের বদলে বারো হওয়া উচিত। এক কথায় খুন-খারাপি ব্যাটিং। ঘুষুড়ির যুবকের দোষ বলতে দেবব্রত দাসের রান আউট। হাতে মার আছে, চালাচ্ছিলেনও দেবব্রত। এ ছেলে কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চলবে তো বটেই, দৌড়বে।
ভিআইপি বক্সে শাহরুখ ও মমতা। বৃহস্পতিবার। ছবি: পিটিআই
আর কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা বিদেশিরা? পাঁচ বছর আগে প্রথম আইপিএলে বেঙ্গালুরু ম্যাচে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের করা ১৫৮ এখনও এই টুর্নামেন্টে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা রেকর্ড। কিন্তু পরের দু’বছরে ম্যাকালামের পারফরম্যান্স দেখে ফিচেল নাইট ভক্তরা নাম দিয়েছিল ‘এলাম, গেলাম, ম্যাকালাম!’ এ বছর পুরনো টিমে ফিরে আসা ম্যাকালামের সামনে বৃহস্পতিবার রাতে ‘নামলাম, ঠ্যাঙালাম, ম্যাকালাম’ হওয়ার সুযোগ ছিল। পাওয়া গেল ‘এলাম, গেলাম’-কে। মর্কেলের মস্তানি মানে পরপর দুটো ইয়র্কারে যখন পরপর জাক কালিস আর মনোজ তিওয়ারির ডান্ডা হু-উ-স, ইডেন জুড়ে শুধুই নিস্তব্ধতা। কেকেআর ব্যাটিং নাকি এ বার এমন হিরে জহরতে মোড়া যে শুধু ছটাতেই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। সেই টিম কি না ৭ ওভারে ৫৫-৬! টিম বারো ওভার পুরো টিকবে কি না নিয়ে ধুকপুকুনি।
কম ওভারের ম্যাচে চালাতে হয়ই। কিন্তু কেকেআর ব্যাটিং দেখলে মনে হবে প্রতি ওভারে বোধহয় কুড়ি রানের আস্কিং রেট। শরীরী ভাষাতে না আছে আগ্রাসন, না আছে ম্যাচ জেতার মরিয়া খিদে। ‘শোলে’র বীরুর মতো ‘চুন চুন কে মারুঙ্গা’ স্টাইলে ব্যাটিংটা সহবাগ তা-ও করেননি। করলে দশ ওভারে ম্যাচ শেষ হয়ে যায়। বীরুর কাজটা করে দিয়ে গেলেন ম্যাচের সেরা ইরফান পাঠান (২০ বলে ৪২ নট আউট)। ইরফান ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল নাইট বোলিং।
হার দিয়ে শুরু, বৃষ্টির আচমকা হানা বাদ দিলে বিনোদনের মহাযজ্ঞের যাবতীয় রসদ মজুত ছিল ইডেনে। কালবৈশাখীর থাবা তখনও আছড়ে পড়েনি। রূপম ইসলাম ও তাঁর ব্যান্ড ফসিল্সের মন ভাল করে দেওয়া গান ছিল, ছিল পুরুলিয়ার ছৌ নাচ আর হাল্কা গ্ল্যামারের ছোঁয়া বলতে শাড়ি পরা চিয়ারকন্যা। উৎসবের রঙিন আবহ তৈরিতে ডিজে মাঝে মাঝেই বাজিয়ে দিচ্ছিলেন ‘ডন’-এর ‘আজ কি রাত’ বা ‘চিকনি চামেলি’। কিন্তু সাড়ে সাতটা বাজতে না বাজতে উৎসবের প্লট একেবারে ছড়িয়ে ছত্রিশ! ঝড়ের তাণ্ডবে মাঠে ধুলোর দৌরাত্ম্য, মাথা বাঁচাতে কেকেআর ভক্তরা তখন গ্যালারির আনাচে-কানাচে। কোথাও বাবার হাত ধরে বিষণ্ণ কিশোরী, কোথাও প্রেমিকের হাত ধরে উদ্বিগ্ন প্রেমিকা। তারই মধ্যে ক্লাবহাউসের আপার টিয়ারে জনৈক যুবকের গুগলি, “উপর থেকে ঢালল, কেকেআর-কে মারল!”
প্রবল বৃষ্টিতেও কালো রেনকোট পরা প্রবীণ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় ও তাঁর টিম সারা ইডেন সময়মতো নীল ত্রিপল দিয়ে ঢেকে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। কেকেআর ব্যাটিংয়ে যদি গ্রাউন্ডসম্যানদের মতো পেশাদারিত্ব থাকত! ‘কভার ঠিক ছিল না’ অভিযোগ অন্তত সিএবি-র চৌকাঠ পেরিয়ে অন্দরমহলে ঢুকে পড়ে কর্তাদের অস্বস্তি বাড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
তখনও বৃষ্টি শুরু হয়নি। ছবি: এএফপি
পৌনে ন’টা নাগাদ বৃষ্টি থেমে যখন পিচ কভার তোলা শুরু, তখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সপার্ষদ ইডেনে। বাচ্চাকাচ্চাদের নিয়ে শাহরুখও। বলিউডের নায়ককে অবশ্য হেরেই ফিরতে হচ্ছে। ধারে ও ভারে অনেকটাই পিছিয়ে থেকে ইডেনে এসেছিল প্রতিপক্ষ। দিল্লিতে ‘বাজিগর’ ছিলেন একজনই। বীরু সহবাগ। এ কথা কেকেআর মালিক বা অধিনায়কও জানতেন। এ-ও জানা, গত বার আইপিএলে আট নম্বরে শেষ করেছিল দিল্লি। কেকেআর চার। সেই দিল্লিকে পেয়েও উদ্বোধনী ম্যাচে ‘নিউ ডন, নিউ নাইটস’ কোথায়? তার বদলে কেকেআরে সবই তো ‘ওল্ড’।
নাইট ব্যাটিং দেখতে দেখতে ডিজে ম্যাচের মেজাজের সঙ্গে মানানসই একটা গান বাজালে তাঁকে দোষ দেওয়া যেত না। ইডেনে আজ বাজতেই পারত ‘পুরানো সেই দিনের কথা’!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.