|
|
|
|
শ্রমিক-মালিক বিরোধে বন্ধ সুতোকল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
শ্রমিক-মালিক বিরোধের জেরে প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে বন্ধ মেদিনীপুরের একটি সুতোকল। স্বভাবতই সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ শ্রমিকেরা। বেতন বৃদ্ধি, বকেয়া পাওনা মেটানো-সহ নানা দাবিতে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র নেতৃত্বেই এখানে আন্দোলন করছিল শ্রমিকপক্ষ। আইএনটিটিইউসি’র বক্তব্য, মালিকপক্ষ শ্রমিকদের উপর নানা অন্যায় দাবি চাপিয়ে দিতে চাইছে। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটতে পারে। আলোচনার কথা বলছে মালিকপক্ষও। কিন্তু মুখে বললেও কেউই আলোচনায় বসার মতো পদক্ষেপ করছে না বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি দেখে ডেপুটি শ্রম কমিশনার (খড়্গপুর) তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “আগেও একদফা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটতে পারে।” তাঁর আশ্বাস,“দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে কারখানা খোলার ব্যাপারে পদক্ষেপ করব।”
তবে, আলোচনায় জট কাটবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এখনও দু’পক্ষ নিজেদের বক্তব্যে অনড়। শ্রমিকদের দাবি, বেতন কাঠামো নিয়ে নতুন চুক্তি হওয়ার মুখেই কারখানায় ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানো হয়েছে। অন্য দিকে, কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অন্যায্য দাবিতে আন্দোলন চলছিল। এই পরিস্থিতিতে ওই নোটিস ঝোলানো ছাড়া উপায় ছিল না। মেদিনীপুর শহরের তাঁতিগেড়িয়া এলাকায় রয়েছে এই সুতোকল। স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৮০০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। ঠিক কী জন্য এই অবস্থা? স্থানীয় সূত্রে খবর, মজুরি বৃদ্ধি, বকেয়া ভিডিএ (ভ্যারিয়েবল ডিএ) মেটানো, ওয়ার্ক লোড কমানো-সহ নানা দাবিতে এখানে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকেরা। নেতৃত্বে আইএনটিটিইউসি। আগে এখানে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুরই ‘দাপট’ ছিল। |
|
নিজস্ব চিত্র। |
রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি পাল্টায়। ওই সুতোকলের আইএনটিটিইউসি’র ইউনিট সভাপতি পার্থসারথি ঘনা বলেন, “আমরা এখনও মনে করি, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটতে পারে।” তাঁর কথায়, “খড়্গপুর-কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু, পরবর্তীকালে মালিকপক্ষ যে পদক্ষেপ করেছে, তা আলোচনার সঙ্গে মেলে না।” ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল আইচ বলেন, “একে ভিডিএ বকেয়া রয়েছে। তার উপর মালিকপক্ষ বাড়তি ওয়ার্ক লোড চাপিয়ে দিতে চাইছে। এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।” তাঁর কথায়, “সেই ’৯৯ সালে এখানে সিটুর সঙ্গে মালিকপক্ষের চুক্তি হয়েছিল। এখনও সেই মতোই কাজ চলছে। নতুন চুক্তি হওয়ার মুখে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হল।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ২৬ মার্চ কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেয় মালিকপক্ষ। সেই থেকেই কারখানা বন্ধ। বৃহস্পতিবার দুপুরে কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, গেটে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন রয়েছেন। কারখানায় কাজ হচ্ছে না। দু’পক্ষ নিজেদের দাবিতে অনড় থাকলে সমাধানসূত্র বের করা যে জটিল হবে, তা মানছে জেলা প্রশাসনও। শ্রম দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এ ক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গেলে দু’পক্ষকেই অনড় মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে।” কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। কারখানার ভাইস প্রেসিডেন্ট এস কে মেহেতা বলেন, “পরিস্থিতি দেখেই কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যা মিটতে পারে।” লম্বোদর মহান্তি, প্রহ্লাদ দাসের মতো শ্রমিকদেরও আশা আলোচনাতেই সমস্যার সমাধান হবে। প্রহ্লাদ বলেন, “কারখানা বন্ধ থাকায় সমস্যা হচ্ছে। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে জট কাটবে।” |
|
|
|
|
|