কচুরিপানা আর আবর্জনার স্তুপে চেনা চেহারাটাই হারিয়ে গিয়েছে জলঙ্গি নদীর। জল না থাকলে শুকিয়ে যাওয়া নদীর ধার ঘেঁষে শুরু হয়ে যায় চাষবাস। বর্ষার সময়টুকু যা একটু জল থাকে। না হলে বছর ভর জলঙ্গি পানাপানা-পুকুরের চেহারা নেয়। তার উপরে ক্রমাগত মাটি কাটায় বিপন্ন নদী।
রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট থেকে প্রতিমার কাঠামো, রাস্তার জঞ্জাল কিংবা প্ল্যাস্টিকের ক্যারিব্যাগ--সবই জড়ো হচ্ছে নদীতে। নদীই এখন শহরের ডাস্টবিন। আর ন্যূনতম ‘ডাস্টবিনে’র ব্যবস্থাটুকুও করা সম্ভব নয় বলে দায় এড়াচ্ছে স্থানীয় পঞ্চায়েত। করিমপুর-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, “পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আমরা ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতেই পারি। কিন্তু তাতে তো আর সমস্যা মিটবে না। নিয়মিত ওই ডাস্টবিন পরিষ্কার রাখার পরিকাঠামো পঞ্চায়েতের নেই।” |
মহকুমার বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা ছুঁয়ে বয়েছে জলঙ্গি। বর্ষার সময়টুকু ছাড়া বছরের অন্য সময় খুব সামান্যই জল থাকে নদীতে। তবে বছর দশ পনেরো আগেও সারা বছরই নদীতে জল থাকত। বিজয়া দশমীর দিন নদীতে নৌকা বাইচ ছিল করিমপুরের অন্যতম আকর্ষণ। এখন নদীতে জলও নেই, বাইচও হয় না। আবর্জনার স্তুপে ঢাকা পড়েছে নদী।
নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘আমাদের দেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনও দেশের নদীতে আবর্জনা ফেলা হয় বলে আমার জানা নেই। এটা চরম বিস্ময়ের ব্যাপার। ভাবতে অবাক লাগে নদী নিয়ে ন্যুনতম সচেতনতাটুকুও আমাদের নেই। এমনিতেই জলঙ্গির উৎসমুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বর্ষার সময়েই নদীতে জল থাকে। অন্য সময় নদীতে যে জল আমরা দেখতে পাই তা আসলে মাটির তলা থেকে উঠে আসা জল। কিন্তু মানুষের অত্যাচারে নদী যে ভাবে মজে যাচ্ছে তাতে বিপদ বাড়ছে আমাদেরই।’’
কোথাও নদী ভরেছে কচুরিপানায়। কোথাও আবার আবর্জনার ডাঁই। নদীতে জল না থাকলে চলে চাষাবাদও। মাটি মাফিয়াদের দৌরাত্বে প্রতিনিয়ত নদীর পার থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কাটাও গা সওয়া হয়ে গিয়েছে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষের।
তেহট্টের জলঙ্গি নদী বাঁচাও কমিটির সম্পাদক প্রলয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংস্কারের আগে দরকার সচেতনতা। নাহলে নদীর এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তা ছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে নদী সংস্কারও করা হচ্ছে না। আইন করে নদীতে আবর্জনা না ফেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে এই পরিস্থিতি খানিকটা পাল্টাবে। নিদেনপক্ষে বিজ্ঞাপণ দিয়ে সতর্ক করা হলেও কিছুটা ফল মিলতে পারে। তবে এটা সকলকেই মনে রাখতে হবে আমরা যদি নদীকে বাঁচাই নদীও কিন্তু আমাদের বাঁচাবে।’’
তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘নদী সংস্কারের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে পঞ্চায়েতগুলিকে নদী সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে। সে ব্যাপারে সেচ দফতরও তাদের সাহায্য করবে। পাশাপাশি নদীর দু’ধার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও গাছ লাগানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। নদীতে যাতে কেউ আবর্জনা না ফেলে সে বিষয়েও কড়া নজর রাখা হচ্ছে।’’ |