|
|
|
|
মাটি কেটে বিক্রি করায় অভিযুক্ত
সিপিএম নেতা, গোলমাল হরিপালে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হরিপাল |
পুকুর পাড়ের মাটি ‘অবৈধ’ ভাবে বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার উত্তেজনা ছড়াল হুগলির হরিপালের পশ্চিম গোপীনাথপুর পঞ্চায়েতে। মাটি-বোঝাই একটি ট্রাক্টর আটকে পুলিশের হাতে তুলে দেন গ্রামবাসীরা। অভিযুক্ত ব্যক্তি পুকুরটির ‘অন্যতম শরিক’। তিনি সিপিএমের নেতা হওয়ায় বিষয়টি রাজনৈতিক মাত্রা পেয়ে যায়। আসরে নামে তৃণমূল।
বিএলএলআরও দফতরের এক অফিসার বিষয়টি সরেজমিনে দেখতে গিয়ে গ্রামবাসী এবং তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের হাতে ঘেরাও হয়ে পড়েন। অভিযুক্ত ব্যক্তি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও বিএলএলআরও দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম গোপীনাথপুর গ্রামে মুচিবাদলা নামের ওই পুকুরটির আয়তন প্রায় ৩ একর। সেটির অন্যতম মালিক স্থানীয় সিপিএম নেতা রবিন ঘোষ। সম্প্রতি পুকুরটি সংস্কার করাতে চেয়ে হরিপালের বিএলএলআরও দফতরে আবেদনপত্র জমা পড়ে। ওই দফতর সেই আবেদন মঞ্জুর করে। নিয়ম অনুযায়ী, তিনি ওই দফতরে ১২ হাজার টাকা জমাও দেন। গ্রামবাসীদের দাবি, রবিনবাবুই পুকুর সংস্কারের আবেদন করেন। তাঁদের অভিযোগ, আদৌ তিনি পুকুর সংস্কারের কাজে হাত লাগাননি। উল্টে, পুকুর পাড়ের মাটি কেটে কয়েক লক্ষ টাকায় বিক্রির ব্যবস্থা করেন। পুকুর পাড়ের মাটি কাটা শুরু হতেই গ্রামে এ নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার ট্র্যাক্টরে মাটি তোলা শুরু হতেই আশপাশের লোকজন রুখে দাঁড়ান। তাঁদের দাবি, কোথায় মাটি পাঠানো হচ্ছে সে ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি মাটি কাটার কাজে নিযুক্ত শ্রমিক বা ট্রাক্টরের লোকজন। তত ক্ষণে ঘটনাস্থলে চলে আসেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারাও। হট্টগোল শুরু হয়। হরিপাল থানায় খবর যায়। পুলিশ ট্র্যাক্টরটি আটক করে।
সিপিএম সূত্রের খবর, রবিনবাবু পশ্চিম গোপীনাথপুর কৃষি সমবায় সমিতির সম্পাদক ছিলেন। ওই সমবায়ে আলু কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছিল। তার তদন্ত করে মাসখানেক আগে সমবায় দফতর রবিনবাবুকে ৩ বছর সাসপেন্ড করে। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পাপ্পু মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রবিনবাবু নিজের মৃত বাবার সই জাল করে পুকুর সংস্কারের আবেদন করেছিলেন। বিএলএলআরও দফতরের একশ্রেণির অফিসার ও কর্মী এখনও তাবেদারি করছে। তাঁদের সাহায্যে অবৈধ উপায়ে কয়েক লক্ষ টাকায় মাটি পাচার করছিলেন ওই সিপিএম নেতা। এই অন্যায় আমরা রুখে দিয়েছি।” পাপ্পুবাবু জানান, বিষয়টি নিয়ে বিএলএলআরও দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয় তৃণমূলের তরফে। দুপুর দেড়টা নাগাদ দেবজ্যোতি মুখোপাধ্যায় নামে ওই দফতরের এক অফিসার সরেজমিনে তদন্তে যান। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই রবিনবাবুর নামে এফআইআর করতে হবে, এই দাবি তুলে ওই অফিসারকে ঘেরাও করেন বিক্ষোভকারীরা।
রবিনবাবু অবশ্য নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “কোনও আবেদনপত্রে আমি সই-ই করিনি। ফলে তা জাল করারও প্রশ্ন নেই। আবেদন জমা পড়েছে বলেও জানতাম না। আমি কয়েক জনকে পুকুর সংস্কারের জন্য কয়েকটি তথ্য জানতে বলেছিলাম। এর পরে ঠিক কী হয়েছে, বলতে পারছি না। নিশ্চয়ই কোনও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তবে, আইন তার নিজের পথেই চলবে।” ঘটনার সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেন ওই সিপিএম নেতা।
সংবাদমাধ্যমকে দেবজ্যোতিবাবু বলেন, “মাটি কাটা-সংক্রান্ত অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তারই তদন্তে এসেছি। তদন্তে যা পাব, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানিয়ে দেব।” পুলিশ জানিয়েছে, গ্রামবাসীদের অভিযোগ পেয়ে একটি ট্র্যাক্টর আটক করা হয়েছে। কাগজপত্র পরীক্ষা করে করে দেখা হচ্ছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। |
|
|
|
|
|