মনমোহন-আডবাণী কথা
‘সেনা মার্চের’ খবর নির্বোধের কাণ্ড: সেনাপ্রধান
রাজধানী দিল্লির উদ্দেশে ‘সেনা মার্চের’ ঘটনা নিয়ে ‘অহেতুক’ জল্পনা উস্কে দেওয়ায় এ বার তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিজয়কুমার সিংহ।
জানুয়ারির এক শীতের রাতে দিল্লির উদ্দেশে সেনাবাহিনীর দু’টি ইউনিটের ‘মার্চের’ ঘটনা সম্পর্কে গত কাল একটি সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়। সরাসরি না বললেও সেই প্রতিবেদন ছিল মারাত্মক ইঙ্গিতবাহী। গত কাল তা নজরে আসতেই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি ওই ইঙ্গিতকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ-ও বলেন, এ ধরনের প্রতিবেদন আতঙ্ক ছড়ানোর প্রয়াস মাত্র।
আর আজ সেনাপ্রধান বলেন, “এ সব একেবারেই নির্বোধের কাণ্ড। এ ধরনের গল্প ফাঁদা নিন্দনীয়।” তাঁর কথায়, “সব দেখে এটাই মনে হচ্ছে যে, সরকার ও সেনার ওপর কিছু লোক কাদা ছেটানোর চেষ্টা করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
সরকারের শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, ‘সেনা মার্চের’ ঘটনা নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে ঘোরতর অসন্তুষ্ট প্রধানমন্ত্রী। তাঁর মতে, সরকার তথা রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আস্থার ঘাটতি হচ্ছে বলে একটি বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এটা নিন্দনীয়। এ দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সেনাবাহিনীর মধ্যে যে প্রাতিষ্ঠানিক সম্পর্ক বরাবর রয়েছে,এই ঘটনাকে তাতে আঘাত বলেই মনে করছেন মনমোহন। এ ব্যাপারে গত কাল বিজেপি-র বর্ষীয়াণ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। পরিণামে বিজেপি নেতৃত্বও বিষয়টি নিয়ে সংযত প্রতিক্রিয়া জানান। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয় নেতৃত্বের কাছেই স্পষ্ট যে, সরকার ও সেনার মধ্যে আস্থার ঘাটতির ছবি উঠে এলে তা ভবিষ্যতে দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে আন্তর্জাতিক মহলে। শুধু মনমোহন-আডবাণী নন, তামাম রাজনৈতিক নেতৃত্ব এমন জল্পনার বিরুদ্ধে এখন সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন।
তবে এই বিতর্কের জন্য সরকারের রাজনৈতিক ‘অব্যবস্থা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর গত কাল আডবাণী দলকে সংযত প্রতিক্রিয়া দেওয়ার নির্দেশ দেন ঠিকই। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, আসলে সরকার ও সেনার মধ্যে আস্থার ঘাটতি নিয়ে যে ছবি উঠে আসছে, সে জন্যও সরকারই দায়ী। কেন্দ্রে রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অভাব রয়েছে। তা না হলে যে বিতর্ক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিটিয়ে ফেলার কথা, তা বারংবার প্রকাশ্যে আসবেই বা কেন?
সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭ জানুয়ারি রাতে হরিয়ানার হিসারে অবস্থিত ভারতীয় সেনার ৩৩ আর্মার্ড ডিভিশনের মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রির একটি পুরোদস্তুর সামরিক ইউনিট জাতীয় সড়ক ধরে দিল্লির দিকে এগোচ্ছিল। একই সঙ্গে আগরা থেকে প্যারা বিগ্রেডের একটি বাহিনী দিল্লির দিকে অগ্রসর হয়। ঘটনাচক্রে তার পর দিনই বয়স বিতর্ক নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সেনাপ্রধান। তার আগে দুই বাহিনীর এই ‘মার্চ’-এর ঘটনা নিয়ে সরকারের শীর্ষ স্তরে সেই রাতে তোলপাড় পড়ে গিয়েছিল বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। যদিও ওই সেনা ‘মুভমেন্ট’-এর কথা সরকারের তরফেও স্বীকার করে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রতিরক্ষামন্ত্রী-সহ সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইয়ে দুইয়ে চার করা অতিসরলীকরণ মাত্র। কারণ, সেনার ‘মুভমেন্ট’ ছিল রুটিন প্রক্রিয়া। ঘন কুয়াশার মধ্যে এগোনোয় সেনা কতটা রপ্ত হয়েছে, তার অনুশীলন হচ্ছিল সে রাতে।
তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, এই খবর প্রকাশের পর এ বার বরং চাপে পড়ে গেলেন সেনাপ্রধান। তাঁর আচরণ নিয়ে রাজনৈতিক স্তরে ইতিমধ্যেই সংশয়-সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাঁকে বরখাস্ত করার দাবি আগেও উঠেছে। ‘সেনা মার্চে’র ঘটনা নিয়ে জল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাপ্রধানের দিকে ফের তর্জনী উঠে গেল। প্রতিরক্ষা কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ক’দিন আগেই সরব হন সেনাপ্রধান। তাঁর সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সিবিআই তদন্তও শুরু করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, সেই সব তদন্তও এখন পিছনের সারিতে চলে যাবে। বরং এখন মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে ‘সেনা মার্চ’ নিয়ে বিতর্ক।
সামগ্রিক এই পরিস্থিতিতে আজ নেপাল সফরে গিয়ে মুখ খোলেন ভি কে সিংহ। তোপ দাগেন সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে। তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ নতুন তথ্যও সামনে এসে পড়েছে। জানুয়ারির রাতে ‘সেনা মার্চে’র ঘটনা নিয়ে গত কাল সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশের তিন সপ্তাহ আগে একটি ইংরেজি পাক্ষিকের সাংবাদিককে সেনাপ্রধান সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার আগামিকাল প্রকাশিত হতে চলেছে। মজার বিষয় হল, ১৩ মার্চ দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, সরকার ও সেনার বিরুদ্ধে কাদা ছেটাতে নানা রকম ‘গল্প’ লেখা হচ্ছে। এমনকী, সেনা ‘মুভমেন্ট’কে সেনা ‘মার্চ’ বলেও দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের মতে, এর থেকে এটাই স্পষ্ট যে, ১৭ জানুয়ারির রাতের ঘটনা নিয়ে সংবাদপত্রে যে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে পারে, তার আঁচ সেনাপ্রধান আগেই করেছিলেন। সে ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা কাটাতে তিনি আগাম কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.