পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে কোঝিকোড়ের সাজসজ্জা দেখে রীতিমতো উত্তেজিত, বিস্মিত বাংলার সিপিএম নেতারা। বিমানবন্দরে নেমে অভ্যর্থনার বহর এবং ঢাকঢোল, ক্যানেস্তারা দেখে ব্যাগপত্তর হাতে নেওয়ার আগেই বাইরে বেরিয়ে অভ্যর্থনাকারীদের সঙ্গে মোলাকাত করতে গিয়েছিলেন গৌতম দেব। পরে জানতে পারলেন, কোঝিকোড় পুরসভা গত ৩৪ বছর ধরে চালাচ্ছে বামেরাই। বিস্মিত গৌতমের প্রতিক্রিয়া, “সে কী! এখানেও ৩৪ বছর!” তথ্যটা জানার পরে বিমান বসু যে কোনও আলাপচারিতায় বা আলোচনাচক্রে বলছেন, “ভাল কাজ না করলে, এত বছর টিকে থাকা যায় না। আমরাও তো ৩৪ বছর ছিলাম।” বিমান-গৌতমরা অবশ্য জানেন না, কেরলের এক প্রাক্তন মন্ত্রী কী বলছেন! তাঁর মন্তব্য, “বাংলার রেকর্ড তো থেমে গিয়েছে! আমরা এখনও ব্যাট করে যাচ্ছি।”
|
বাইরে লাল পাথুরে দেওয়াল। কেল্লায় ঢোকার বিরাট দরজা। মঞ্চের পিছনেও লাল রঙের এক প্রাচীন কেল্লার আদল ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাতে লাল-হলুদ রঙের আলো ফেলে তৈরি হয়েছে মায়াময় পরিবেশ। কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসের জন্য এ ভাবেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে শহরের টেগোর হলকে। প্রথম দিন এই নকল কেল্লা দেখে কেরলের বাইরের প্রতিনিধিরা বেশ হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। এক রসিক নেতার কথায়, “আমাদের তো কোনও দিনও দিল্লির লাল কেল্লায় বসে পতাকা তোলা হবে না! এই ভাবেই পিচবোর্ডের কেল্লা সাজাতে হবে!” পরে জানা গেল এ দিল্লির লাল কেল্লা নয়, টিপু সুলতানের তৈরি একটি দুর্গের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে কোঝিকোড়ে। টিপু যখন কালিকট আক্রমণ করেন, তখন মালাবারে রাজধানী গড়ার জন্য এই কেল্লা তৈরি করেছিলেন তিনি। টিপুর কেল্লারই ‘কপি’ করেছে সিপিএম।
|
দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো কি একেই বলে? সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসে প্রত্যেক বারই বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এ বার ব্যতিক্রম। দলের নেতারা বলছেন, পার্টির আর্থিক অবস্থা এখন ভাল নয়। তাই খরচ কমাতে এই সিদ্ধান্ত। নিন্দুকেরা বলছেন, আসলে কেউ আর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। তাই জেনেবুঝেই এই পরিকল্পনা। পার্টি কংগ্রেস শুরুর আগের দিন অবশ্য কোঝিকোড়ে দেখা মিলল কিউবার রাষ্ট্রদূত আবেলারডো কুয়েটো সোসা-র। প্রকাশ কারাটের সঙ্গে এক আলোচনাসভায় যোগও দিলেন সোসা। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’। বিদেশি কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা না এলেও অবশ্য শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন। তা ছাপিয়ে বিলিও করা হচ্ছে সম্মেলনস্থলে।
|
উত্তর ২৪ পরগনায় সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা সকলেরই জানা। উত্তরের সেই বিবাদ কিন্তু দক্ষিণের এই সৈকত-শহরে এসে উধাও। কোঝিকোড়ে আসার পথে মুম্বই বিমানবন্দর থেকেই দল বেঁধে ঘোরাঘুরি করছেন অমিতাভ নন্দী, অমিতাভ বসু, তড়িৎ তোপদার, রবীন মণ্ডল, রেখা গোস্বামী, মানস মুখোপাধ্যায়রা। কোঝিকোড়ে এসেও হোটেল থেকে এক গাড়িতে করে পার্টি কংগ্রেসে যাচ্ছেন, এক গাড়িতেই হোটেলে ফিরছেন। আরব সাগরের হাওয়ায় যেন উড়ে গিয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কালো মেঘ। |