মহাকরণের সংরক্ষিত এলাকায় অবাধে যাতায়াতের জন্য তৃণমূল কর্মী সংগঠনের কোন কোন নেতা ‘গ্রিন কার্ড’ পাবেন, তা ঠিক করতে কালঘাম ছুটেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বরাষ্ট্র দফতরের। ঝুঁকি না নিয়ে তারা ফাইল পাঠিয়ে দিয়েছে শ্রম দফতরের কাছে। বল এখন মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর কোর্টে।
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, স্বীকৃত প্রতিটি কর্মী সংগঠন সর্বোচ্চ পাঁচ জনের জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরে ‘গ্রিন কার্ড’-এর আবেদন করতে পারেন। তবে সেটা করতে হবে সংগঠনের নিজস্ব প্যাডে এবং একই ঠিকানা থেকে। এই কার্ড দেখিয়ে সংগঠনের নেতারা মহাকরণের সংরক্ষিত অঞ্চল দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন এবং মন্ত্রী-সচিবদের ঘরে ঢোকার সুযোগ পান। ২০ মে রাজ্যে নতুন সরকার তৈরি হওয়ার পর থেকে মহাকরণে তৃণমূলের পাঁচটি সংগঠন কমবেশি সক্রিয়। প্রতিটি সংগঠনই নিজেদের তৃণমূলের একমাত্র সংগঠন বলে দাবি করে। তাদের অধিকাংশ নেতাই অবসরপ্রাপ্ত।
এই পরিস্থিতিতে গোড়া থেকেই অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। বিভিন্ন কর্মী-সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মহাকরণে একটি বৈঠকে প্রকাশ্যেই এই নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে দলের তরফে ‘ইউনাইটেড স্টেট গভনর্র্মেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’-কে তাঁদের মূল সংগঠন বলে ঘোষণা করা হয়। তবে এখনও সংগঠনের সম্পাদক ও সভাপতি পদে কাউকে বসানো যায়নি। এই অবস্থায় সংগঠনের দুই পদাধিকারী দু’টি ভিন্ন ঠিকানা দেখিয়ে ‘গ্রিন কার্ড’-এর জন্য আবেদন করেন স্বরাষ্ট্র দফতরে। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে।
তৃণমূল সংগঠনের যে দুই নেতা এই কার্ডের জন্য আর্জি জানিয়েছেন, তাঁদের এক জন রজত রায় কাজ করেন বি জি প্রেসে। তিনি আবেদনপত্রে ঠিকানা দিয়েছেন ১২এ বেকার রোড, কলকাতা-২৬। অপর জন মহাকরণের কৃষি দফতরের কর্মী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি ঠিকানা দিয়েছেন ১২, বিবাদি বাগ, কলকাতা-১। শাসক দলের স্বীকৃত একটি সংগঠনের দুই নেতা কী করে আলাদা ঠিকানা থেকে আবেদন করলেন? রজতবাবুর বক্তব্য, “আমি ২০১৪ সালে অবসর নেব। পার্থ ২০২৮-এ। তাঁকে বলেছিলাম, দু’জনে একসঙ্গে সংগঠনের কাজ করি। তাই ‘গ্রিন কার্ডের’ জন্য এক সঙ্গেই আবেদন করব। কিন্তু ও একাই আবেদন করে বসে। বাধ্য হয়ে আমিও আলাদা ভাবে আবেদন করেছি।” অন্য দিকে পার্থবাবুর বক্তব্য, “২০০৭-এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সরকারি কর্মীদের নিয়ে একটি কোর কমিটি তৈরি হয়েছিল। আমি তখন থেকেই ওই কমিটিতে আছি। তাই আবেদন করেছি।”
কিন্তু পাঁচ জন প্রতিনিধির নাম দেওয়ার সুযোগ থাকলেও কেন তা করা হল না? রজতবাবুর উত্তর, “আমাদের স্থায়ী কমিটি নেই। তাই একার জন্যই আবেদন করেছি।” পার্থবাবু বলেন, “স্থায়ী কমিটি আছে। তবে তা নিষ্ক্রিয়। ২০১০ সালের নভেম্বর মাসের পর কমিটির বৈঠক হয়নি।” পার্থবাবু অবশ্য কার্ডের আবেদন করেছেন সংগঠনের তিন জন প্রতিনিধির জন্য। তাঁর ব্যাখ্যা, “বাকি দু’জনের নাম শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করব।” স্বরাষ্ট্র দফতরের এক অফিসারের কথায়, “এমন উদ্ভট সমস্যায় আমাদের আগে কখনও পড়তে হয়নি।” |