ঝড়ে পড়ল বাড়ি, গেল প্রাণও
যার প্রতীক্ষায় ছিল গোটা দক্ষিণবঙ্গ, সেই কালবৈশাখীই প্রাণ কাড়ল কালনায়।
বুধ ও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরপর দু’টি কালবৈশাখীর ঝাপটায় দুলে উঠল বর্ধমান। তবে এ দিনের ঝোড়ো হাওয়ার তুলনায় বুধবারের তাণ্ডব ছিল অনেক ব্যাপক। কালনায় নামে শিলাবৃষ্টি। ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচশোরও বেশি মাটির বাড়ি। উপড়ে যায় বিদ্যুতের খুঁটি। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে থাকায় কালনা ২ ব্লকে কাশীনাথ ক্ষেত্রপাল (৫২) নামে এক জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।
বর্ধমানের রামচণ্ডীপুরে হেলে পড়া ট্রাফিক পোস্ট। ছবি: উদিত সিংহ।
বুধবার সন্ধ্যাতেই রসুলপুরের কাছে তার ছিঁড়ে পূর্ব রেলের বর্ধমান-হাওড়া মেন লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। ব্যান্ডেল-কাটোয়া লাইনেও বাঘনাপাড়া, গুপ্তিপাড়া, অম্বিকা কালনায় তার ছেঁড়ে। গাছ পড়ে আটকে যায় এস টি কে কে রোড, কালনা-মেমারি, কালনা-পাণ্ডুয়া রোড। বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আটকে পড়েন পথচলতি মানুষও।
ঝড়ের দাপটে বুধবার গভীর রাত থেকেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জেলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ না থাকায় পুরসভাগুলিতে পাম্প চালিয়ে জল তোলা বা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুতকর্মীরা চেষ্টা করলেও বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত সুরাহা হয়নি। ফলে শহরের নানা ওয়ার্ডে পানীয় জল নেওয়া নিয়ে বাসিন্দারা বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বুধবারের ঝড়ে জেলার নানা অঞ্চলে বিদ্যুৎ পরিষেবা বেহাল হয়ে পড়েছে। রাত পর্যন্ত কালনা ও বর্ধমান শহরে ছিঁড়ে পড়া বিদ্যুতের তার মেরামতের কাজ চলেছে।” জেলা মুখ্য কৃষি করণ সূত্রে জানানো হয়, গত ৩১ মার্চ ও বুধবারের ঝড়বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টির জেরে জেলার ৮-১০টি ব্লকে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কাঁকসা, গলসি ও মন্তেশ্বরে ক্ষতির পরিমাণ বেশি।
কালনায় তছনছ ঘরবাড়ি। কেদারনাথ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।
কালনা মহকুমা কৃষি দফতর জানায়, ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ধানে সবে শিস আসতে শুরু করেছিল। মন্তেশ্বরে ১৫০০ হেক্টর, পূর্বস্থলী ১ ব্লকে ১১৪০ হেক্টর, পূর্বস্থলী ২ ব্লকে ৪০০ হেক্টর , কালনা ১ ব্লকে ১১০০ হেক্টর ও কালনা ২ ব্লকে ২৫৫০ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। মহকুমা কৃষি আধিকারিক স্বপনকুমার মারিক বলেন, “শিলাবৃষ্টিতে যে সব জমিতে সবে ধানের শিস আসতে শুরু করেছিল তার ৩০ শতাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তবে কাটোয়া মহকুমায় ঝড়ের ততটা প্রভাব পড়েনি। তবে মহকুমা কৃষি আধিকারিক অজয় ঘোষ বলেন, “ঝোড়ো হাওয়ায় বোরো ধানে কিছুটা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।”
বস্তুত, ঝড়ের দাপটে কালনাতেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এ দিন সকালে দেখা যায়, কালনা ১ ও ২ ব্লকের বেলের হল্ট, উপলতি, হরিশঙ্করপুর, বেলেডাঙা, সূর্যপুর, পেয়ারিনগর, ভাটরা, কয়া, বাঘনাপাড়া, সিংরাইলের মতো অজস্র গ্রামে নষ্ট হয়ে গিয়েছে মাটির বাড়ি। ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছে টিন, অ্যাসবেসটস, খড় বা টালির ছাদ। মহকুমা প্রশাসন জানায়, ৫টি ব্লকের মধ্যে ৪টি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। কালনা ১ ব্লকে ২৫৬টি ও ২ ব্লকে ৭০টি বাড়ি মাটিতে মিশে গিয়েছে। মহকুমা জুড়ে ১৩৮০টি বাড়ির ক্ষতি আংশিক।
নিজস্ব চিত্র।
কালনা শহরের ১৮টি ওয়ার্ডে শ’খানেক বাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০টি বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সারগোড়িয়া গ্রামের একটি চালকলের টিনের ছাদ, একটি মুড়িকলও। তাঁতঘরগুলির ক্ষতির পরিমাণও যথেষ্ট। পেয়ারিনগর গ্রামের বাসিন্দা দীপক সাহার দুশ্চিন্তা, “আবার তাঁতঘর তৈরি করতে পারব কি না জানি না। এলাকায় অনেকেরই আমার মতো অবস্থা।” পূর্বস্থলী এবং মন্তেশ্বরেও ১২টি করে বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার ব্যাপারে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.