বাজল তাসা, জামিন পেয়ে চললেন সাউদ
সিপিএমের তপন-সুকুরের মতো ‘ডাকসাইটে’ নেতা নন। তবু প্রায় একই কায়দায় জামিন পাওয়ার পরে কার্যত ‘বীরের সম্মান’ দেওয়া হল একাধিক খুনে অভিযুক্ত তৃণমূলের সাউদ মিঞাকে।
সিপিএম নেতাদের মতো শুধু মিছিল করে নিয়ে যাওয়াই নয়, তৃণমূল কর্মীদের উৎসাহ ছিল এককাঠি বেশি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাটোয়ায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে সাউদকে গাঁদার মালা পরিয়ে, তাসা বাজিয়ে, কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে গেলেন তাঁরা। কেতু্গ্রামের বাড়িতে ফেরার পথে কান্দরায় দেওয়া হল সংবর্ধনাও। তপন-সুকুর ছাড়া পাওয়ার পরে সিপিএম নেতারা দাবি করেছিলেন, তাঁরা ‘দলের সম্পদ’। আর তৃণমূলের রাজ্য নেতা দাবি করলেন, সাউদ ‘জনপ্রিয়’, তাই তাঁকে নিয়ে মানুষের এই উচ্ছ্বাস।
মালা পরিয়ে সংবর্ধনা। নিজস্ব চিত্র।
একাধিক খুন-সহ মোট ১৪টি অপরাধের অভিযোগ রয়েছে কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা সাউদের বিরুদ্ধে। সিপিএম এবং ডিওয়াইএফ কর্মী খুন ছাড়া দলীয় কর্মী সুকুর আলির খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্ত সাউদ। তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও পুলিশ তাঁকে দীর্ঘ দিন ধরতে পারছিল না। গত বছর ২০ নভেম্বর কেতুগ্রামের কান্দরায় তৃণমূলের একটি জনসভায় রাজ্যের তৎকালীন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা কেতুগ্রামের দলীয় পর্যবেক্ষক অনুব্রত মণ্ডল এবং দলের দুই বিধায়কের সঙ্গে মঞ্চে সাউদকে দেখা যায়। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হতেই বিতর্ক শুরু হয়। মঞ্চ থেকে সাউদকে ধরা হলে জনসভায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারত বলে দাবি করে পুলিশ। তৃণমূল নেতৃত্ব দাবি করেন, বাম জমানায় সাউদকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে সিপিএম এবং পুলিশ। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও এ কথা জানিয়ে আসেন তৃণমূলের নেতারা। প্রকাশ্যে না এসে সাউদকে লুকিয়ে থাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন তাঁরা।
এর পরে গত ৫ জানুয়ারি কেতুগ্রামের বামুনডিহি গ্রামে বাড়ির কাছ থেকে সাউদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। ৯৫ দিন জেলে থাকার পরে এ দিন কাটোয়া আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করে। ইতিমধ্যে হাইকোর্টে দু’বার তাঁর জামিনের আবেদন না-মঞ্জুর হয়েছিল।
এ দিন সকাল থেকেই কেতুগ্রাম ১ ব্লক থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা কাটোয়া আদালত চত্বরে জড়ো হতে শুরু করেন। প্রায় একশোটি গাড়ি, চারটি বাস ও প্রচুর মোটরবাইকে চড়ে দলে দলে লোকজন জড়ো হন। সন্ধ্যায় কাটোয়া উপ-সংশোধনাগার থেকে সাউদ ছাড়া পাওয়ার পরেই তাঁকে নিয়ে উল্লাস শুরু হয়ে যায়। জেল থেকে বেরোতেই সাউদের গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া হয়। তাসা ও ব্যান্ড বাজতে শুরু করে। কেতুগ্রামের মহেশপুরের ডালিম শেখ, বামুনডিহির সুশীলা মাঝিদের কথায়, “সিপিএমের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। তখন সাউদ মিঞা আমাদের রক্ষা করেছিলেন। বিপদে-আপদে তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই তাঁকে সংবর্ধনা দিয়ে নিয়ে যেতে এসেছি।” বাড়ি ফেরার পথে কেতু্গ্রামের কান্দরাতেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে।
তৃণমূলের কেতু্গ্রামের পর্যবেক্ষক তথা বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রতবাবুর দাবি, “সিপিএম সাউদকে ফাঁসিয়েছিল। আজ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কয়েক হাজার মানুষের জড়ো হওয়া প্রমাণ করল, সাউদ কতটা জনপ্রিয়।” পক্ষান্তরে, সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের বক্তব্য, “এলাকায় সন্ত্রাসের অন্যতম মুখ সাউদ। জামিন পাওয়ার পরে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়াতেই পরিষ্কার, সন্ত্রাস আরও বাড়বে।” বাড়ি ফেরার পথে সাউদের সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “এত মানুষের উপস্থিতিতে আমি অভিভূত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.