মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১২। তার মধ্যে ৮ জন ছিলেন কংগ্রেসের। বাকিরা সিপিএমের সদস্য। গত ১৯ জানুয়ারি ওই ৯ কংগ্রেস সদস্যই তৃণমূলে যোগ দেন। গ্রাম পঞ্চায়েতটিও তৃণমূলের দখলে চলে যায়। দলবদলের আড়াই মাস পরে এলাকার বাসিন্দারা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ইন্দিরা আবাস থেকে একশো দিনের প্রকল্প-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একগুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ আনলে তদন্তে নেমেছে মালদহের চাঁচল মহকুমা প্রশাসন। গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ায় কংগ্রেসই পিছন থেকে বাসিন্দাদের দিয়ে ওই ভিত্তিহীন অভিযোগ করাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। চাঁচলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক অশোক সরকার বলেন, “ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিডিওর কাছে রিপোর্ট পেলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের বিডিও ঋতম ঝাঁ জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজে ২১টি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ওই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কাটার পাশাপাশি ওই প্রকল্পগুলিতে অর্ধেক টাকারও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। এ ছাড়া ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকায় যে সমস্ত গাছ লাগানো হয়েছিল তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাঁচা লাগানো হয়নি। অথচ খাঁচা কেনার খরচ দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পিছিয়ে পড়া এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ৮০ থেকে ১০০ ফুট গভীরে নলকূপ বসিয়ে ১৭০ ফুটের বিল করা হচ্ছে অভিযোগ। গোপনে টেন্ডার করে ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারকে দিয়ে নলকূপ বসানোর কাজ করানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। ইন্দিরা আবাস যোজনায় প্রকৃত উপভোক্তাদের বাদ দিয়ে যারা টাকা দিতে পারছেন তাদেরই ঘর দেওয়া হচ্ছে বলেও বাসিন্দাদের অভিযোগ। পঞ্চায়েতের প্রধান বিজলি সরকার বলেন, “অভিযোগ তো নানা ভাবে সাজানো যেতেই পারে। কিন্তু সেটা তো প্রমাণ করতে হবে। যখন ট্রাক্টর দিয়ে কাজ করা হচ্ছিল তখন তাহলে কেন ধরা হয়নি। গায়ের জ্বালা মেটাতে কংগ্রেসই এসব করাচ্ছে।” জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা কংগ্রেস নেতা মোস্তাক আলমের অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকেই ওই গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান-সহ অন্যান্য সদস্যরা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বাসিন্দারা অভিযোগ জানানোর পরে সতর্ক করে দেওয়া হলেও সদস্যরা তা কানে তোলেননি। তিনি বলেন, “দল ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হতে নিজেদের বাঁচাতে দল ছেড়েছেন সদস্যরা।” তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লক কমিটি সভাপতি তোবারক হোসেনের পাল্টা দাবি, ওই পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ সব সদস্যই যখন তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জানান তখন তাঁদের পরিষ্কার বলা হয়, দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, “যে অভিযোগ উঠেছে তা দলীয় স্তরেও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কাউকেই ছেড়ে কথা বলা হবে না।” |