গলা ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন কোচবিহারের খোল্টা গ্রামের বাসিন্দা পার্বতী রায়। কথা বলতে পারছিলেন না। ব্যথাও দিন দিন বাড়ছিল। শনিবার কাশির সঙ্গে রক্ত দেখে ভয় পেয়ে যান পরিজনেরা। তারপরেই দেখেন সাদা পোকার মতো কিছু বার হচ্ছে তাঁর মুখ দিয়ে। রবিবার ব্যথা আরও বাড়লে সোমবার তাঁকে ভর্তি করানো হয় আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে। তখন জানা যায়, তাঁর গলার ভিতরে ঢুকে ডিম পেড়েছে মাছি। কাশির সঙ্গে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে সেই ডিম থেকে হওয়া লার্ভা।
হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ সৌম্যজিৎ দত্ত বলেন, “নাক ও কান দিয়ে এ ভাবে মাছির লার্ভা বার হওয়ার ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু মুখ দিয়ে লার্ভা বার হওয়ার ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না।”
তবে, পতঙ্গ বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন একে বিরল ঘটনা বলা যায় না। এন্টেমোলজিস্ট হিরণ্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, “মুখে, বিশেষত দাঁতে কোনও ঘা হলে সেখানে মাছি ডিম পাড়তে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলে মিয়াসিস। কোনও কোনও ক্ষেত্রে পোকা শরীরের ভিতরে ঢুকে যায়। কখনও আবার মুখের ভিতরে জন্মে বাইরে বেরিয়ে আসে।” |
কিন্তু কী ভাবে গলার ভিতরে ঢুকে ডিম পাড়ল মাছি?
আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, বছর পঁয়তাল্লিশের পার্বতীদেবীর নাকের হাড় শুকিয়ে গিয়েছে। নাকের ছিদ্রও স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বড় হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, সেখান দিয়েই মাছি ঢুকে পড়ে ডিম পেড়েছে। এখন সেই ডিমই লার্ভা হয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসছে। সৌম্যজিতবাবু বলেন, “ওই মহিলার গলার বাঁ দিকের টনসিলের পাশে ও নাকে কিছু লার্ভা বাসা বেঁধেছে। তাই গলায় ব্যথা হচ্ছে। কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসছে জীবন্ত লার্ভা।”
সৌম্যজিতবাবু জানান, পার্বতীদেবীর গলা থেকে লার্ভা বার করার জন্য ইথার ও তার্পিন তেল ভেজা রুমাল ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই রুমাল নাকের সামনে ধরার কিছুক্ষণের মধ্যে জীবন্ত লার্ভা বার হচ্ছে। তবে তিনি স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়াই করছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, পার্বতীদেবীর এক্স-রে, সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখনও চিকিৎসকেরা হাতে পাননি। তা দেখার পরে প্রয়োজনে এন্ডোস্কোপি করা হতে পারে। গলার ক্ষত শুকনোরও চেষ্টা হচ্ছে।
পাবর্তীদেবীর ছেলে বিনোদ রায় বলেন, “খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তবে চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করেছেন, মা সুস্থ হয়ে যাবে।” |