অভিযুক্ত ‘স্যাক্স’
প্রশিক্ষণ-শিবিরের নামে এড্স প্রকল্পের টাকা ‘নয়ছয়’
দিল্লি থেকে এড্স প্রকল্পের টাকা এসেছিল এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসার বিষয়ে মেডিক্যাল অফিসার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দিতে। সেই সঙ্গে ওই টাকা খরচের কথা ছিল এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের কাজ পর্যবেক্ষণ, কাউন্সেলারদের কর্মশালার জন্যও। যাতে এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা-পরিষেবা, কাউন্সেলিং এবং সেই কাজে ঠিকঠাক নজরদারি চলতে পারে। কিন্তু ওই টাকার সিংহভাগ রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা নামী-দামি হোটেলে চর্বচূষ্য ও চা-কফি-ঠান্ডা পানীয় খেয়ে এবং যথেচ্ছ ভাবে গাড়ি চড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কাছে তাঁরা টাকা খরচ সংক্রান্ত যে বিল জমা দিয়েছেন, তাতে সেটাই দেখা গিয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এড্স প্রকল্পের টাকা খরচের প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখার পরে জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্তাদের ‘পেটপুজো’র বিল কখনও তিন দিনে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। কখনও আবার সল্টলেকের স্বাস্থ্য ভবন থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ বা আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রশিক্ষণ শিবিরে আসা-যাওয়ায় তাঁদের গাড়ির বিল দু’দিনে প্রায় এক লক্ষ টাকা টপকে গিয়েছে!
‘রাজ্য এড্স নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’য় (স্যাক্স) আর্থিক দুর্নীতি চলছে বলে বছর দুয়েক আগেই খবর পেয়েছিল ‘কেন্দ্রীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা’ (ন্যাকো)। তাই ২০১০-এর এপ্রিল মাসেই তারা স্যাক্সের খরচ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয় কলকাতার একটি অডিট সংস্থাকে। কিছু দিন আগে তাদের তৈরি চূড়ান্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য দফতরে এবং ন্যাকোর কাছে জমা পড়েছে। যার প্রতিটি পাতায় লক্ষ লক্ষ টাকা নয়ছয়ের বিস্তারিত তথ্য। অডিট রিপোর্টেও লেখা হয়েছে, এইচআইভি প্রকল্পের টাকা এ ভাবে গাড়ির তেলে আর খাবারে খরচ করার কথাই নয়।
অডিট রিপোর্ট বলছে, ২০১০ সালের ২২, ২৩ ও ২৪ জুলাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ন্যাকোর টাকায় মেডিক্যাল অফিসারদের প্রশিক্ষণ-কর্মসূচির আয়োজন করে স্যাক্স। সেখানে ন্যাকোর পাঠানো টাকার খরচের হিসেব দিতে গিয়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকার গাড়ির বিল দেখিয়েছেন স্যাক্স-কর্তারা। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা গাড়ির জন্য শুধু ‘অ্যাডভান্স’ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন থেকে মেডিক্যাল বা আর জি কর যাতায়াতে কী ভাবে তিন দিনে ১ লক্ষ টাকার বেশি খরচ হতে পারে, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারেননি স্যাক্সের কর্তারা।
গাড়ি কোথা থেকে কোথায়, কতটা চলেছে, তার কাগজপত্রও মেলেনি। যে তারিখে ওই কর্মসূচি ছিলই না, গাড়ির অনেক বিলে সেই সব তারিখও রয়েছে। অডিট রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে, এই হিসেবের বিস্তারিত তথ্য ও কারণ জানতে চেয়েও তারা পায়নি।
খরচে গরমিলের কথা স্বীকার করছেন স্যাক্স-কর্তারাও। এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “আমরা বুঝতে পারছিলাম, প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করা হচ্ছে। যে অফিসার প্রশিক্ষণ বা কর্মশালার আয়োজন করবেন, টাকা খরচও হওয়ার কথা তাঁরই নির্দেশে। কিন্তু স্যাক্সের তৎকালীন কয়েক জন শীর্ষ কর্তা বলে দিয়েছিলেন, টাকার ব্যাপারটা সরাসরি ফিন্যান্স বিভাগ দেখবে। এটা নিয়ে যেন অন্য কেউ মাথা না গলায়। অনেক ভুয়ো বিল তৈরি হয়েছে।”
আর জি কর ও মেডিক্যালে ওই তিন দিনের প্রশিক্ষণ-শিবিরে ‘ব্যক্তিগত খরচ’ হিসেবে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার খাওয়া-দাওয়ার বিল দেখানো হয়েছে। মূলত সল্টলেকের আশপাশের বিখ্যাত কয়েকটি দোকান ও নামী রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কেনা হয়েছে। চিকিৎসকদের একটি ক্যান্টিন থেকেও (কোন ক্যান্টিন, তার উল্লেখ নেই) ১৮ হাজার টাকার খাবার কেনা হয়েছে। দু’টি বিরিয়ানির হোটেলে বিল হয়েছে যথাক্রমে পাঁচ হাজার টাকা ও পাঁচ হাজার চারশো টাকা। বেশ কিছু বিল দেখানো হয়েছে আলিপুর পুলিশ ক্যান্টিনের। উত্তর কলকাতায় আয়োজিত প্রশিক্ষণ শিবিরের জন্য সুদূর দক্ষিণের পুলিশ ক্যান্টিন থেকে কেন খাবার এল, তার জবাব পাওয়া যায়নি।
২০১০ সালের ২৪ ও ২৫ জুন স্বাস্থ্য ভবনে স্যাক্স আয়োজিত ‘সেনসেটাইজেশন অফ আইটিসি’ অনুষ্ঠানের জন্য খাবারের বিল জমা দেওয়া হয়েছে ১০ হাজার ৪৫৫ টাকার। এর মধ্যে একটি দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ, একটি ভুজিয়াওয়ালার দোকান, দু’টি মাল্টিক্যুইজিন রেস্তোরাঁর বিল রয়েছে। কিন্তু কোনও বিলে কোনও বিল নম্বর নেই। ২০১১-এর ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাস্থ্য ভবনে স্যাক্স আয়োজিত একটি এক দিনের ওয়ার্কশপে শুধু চা-কফির বিল দেখানো হয়েছে ১৬২৫ টাকার। ২০১০ সালের মার্চে স্বাস্থ্য ভবনে স্যাক্সের আর একটি রিভিউ বৈঠকে শুধু চা ও পান খাওয়া হয়েছে হাজার টাকার। একই ভাবে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য ভবনে আয়োজিত স্যাক্সের এক দিনের রিভিউ বৈঠকে সল্টলেকের একটি নামী চায়ের দোকানে শুধু চা-কফির বিল হয়েছে প্রায় ১৫০০ টাকা। অদ্ভুত ভাবে উত্তরবঙ্গে এইচআইভি কিট পাঠানোর খরচের মধ্যেও সল্টলেকের নামী দোকান থেকে চা-খাবার বাবদ প্রায় তিন হাজার টাকার বিল জমা দেওয়া হয়, অডিট রিপোর্টেই যাকে সম্পূর্ণ ‘বেআইনি’ বলা হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.