আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ অত্যাবশ্যক পণ্য নিগম বা ইসিএসসি-র পিছু ছাড়ছে না। ৩০০ কোটিরও বেশি টাকার লোহাচুর দুর্নীতির পরে ফের প্রায় ৩৬ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে ওই নিগমের বিরুদ্ধে। এই কেলেঙ্কারিটাও বিগত বাম আমলের। এবং এ ক্ষেত্রেও সিআইডি-কে তদন্তের ভার দিয়েছে রাজ্যের নতুন সরকার।
লোহাচুরের ক্ষেত্রে কেলেঙ্কারিটা হয়েছিল রফতানি ব্যবসায় বিভিন্ন সংস্থাকে প্রচুর টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে। বাম আমলে খাদ্য দফতরের অধীন পণ্য নিগম থেকে ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে অগ্রিম টাকা দেওয়ার সূত্রেই ৩৫ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা তছরুপ হয়েছে বলে বুধবার জানান নতুন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তিনি জানান, ১৭টি বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবসা করার জন্য অগ্রিম হিসেবে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল ২০০৪-’০৫ সালে। কেন, কী ভাবে ওই সব বেসরকারি সংস্থাকে বিপুল পরিমাণ টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল এবং শেষ পর্যন্ত সেই টাকার কী হল, তার কোনও তথ্য পণ্য নিগমের কাছে নেই। মন্ত্রী জানান, সেই সব নথির খোঁজ চলছে।
পণ্য নিগমে ৩২৮ কোটি টাকার লোহাচুর রফতানি কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে সিআইডি ইতিমধ্যে দুই আইএএস অফিসারকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত চলছে অন্য কয়েক জন অফিসারের বিরুদ্ধেও। খাদ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “লোহার আকরিক কেলেঙ্কারির মতো নিগমে তছরুপের নতুন ঘটনাটিরও তদন্ত করবে সিআইডি।” এতেও অনেক আমলা এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি জড়িয়ে পড়বেন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
লোহাচুর দুর্নীতি এবং দ্বিতীয় দফার এই আর্থিক কেলেঙ্কারির মধ্যে মিল আছে অনেকটাই। প্রথমত, দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যবসা করার নামে তছরুপ হয়েছে বলে অভিযোগ। দ্বিতীয়ত, লোহাচুর রফতানির জন্য যে-সব সংস্থাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তদন্তে তাদের বেশ কয়েকটির অস্তিত্বই মেলেনি। খাদ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, দ্বিতীয় তছরুপের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসা করার জন্য ১৭টি সংস্থাকে প্রায় ৩৬ কোটির টাকা অগ্রিম দেওয়া হলেও তাদের মধ্যে আটটি সংস্থার কোনও অস্তিত্ব নেই। বাকিগুলি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবে সিআইডি।
কীসের ব্যবসা করার জন্য ওই সব সংস্থাকে টাকা দেওয়া হয়েছিল?
খাদ্যমন্ত্রী জানান, সম্ভবত মশলা, কাগজ, জামাকাপড় সরবরাহের জন্যই টাকা দেওয়া হয়েছিল সংস্থাগুলিকে। কিন্তু পণ্য নিগম শেষ পর্যন্ত সেই সব সামগ্রীর কতটা পেয়েছিল বা আদৌ পেয়েছিল কি না, তার কোনও নথি পাওয়া যাচ্ছে না। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনকালের হিসেব নিয়ে দ্বিতীয় অডিটে এই কেলেঙ্কারি ধরা পড়েছে। আর কোথায় কতটা অসঙ্গতি আছে, তা খুঁজে বার করার জন্য দফতরের পুরনো হিসেবনিকেশ নিয়ে তৃতীয় দফায় অডিট করা হবে।
খাদ্যমন্ত্রী এ দিন একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, গণবণ্টন ব্যবস্থায় সরবরাহ করা কেরোসিনের ভর্তুকি ব্যাঙ্কের মাধ্যমে গ্রাহককে দেওয়ার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার মানবে না। এখন রাজ্যে যে-পদ্ধতিতে কেরোসিন দেওয়া হচ্ছে, তা বহাল থাকবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, “এটি কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি। এর ফলে অনুদান খাতে তাদের খরচ বাঁচবে। এই নীতি মানবে না রাজ্য।”
কেন মানবে না, তারও ব্যাখ্যা দেন খাদ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, ওই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত রূপায়ণের আগে রাজস্থানের আলোয়ারে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা প্রকল্প যথেষ্ট ফলপ্রসূ নয় বলেই মনে করছে রাজ্য। ওই প্রকল্পের ফল গত ১৬ মার্চ রাজ্যকে জানিয়েছে কেন্দ্র। মন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে মাসে এক লক্ষ ২৬ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন দরকার। কিন্তু কেন্দ্র এখন দেয় মাত্র ৮০ হাজার ৩৮৪ কিলোলিটার। ফলে রাজ্যের পক্ষে জঙ্গলমহল, পাহাড়, চা-বাগান, এবং সুন্দরবন-সহ উপকূল এলাকায় কেরোসিন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। |