মার্চের শেষ দিনে কালবৈশাখী তার আগমন জানান দিয়েছিল মাত্র। আর বুধবার রাতে সে হাজির হল বিপুল বিক্রমে। এতটাই যে, ওই কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে উধাও হয়ে গেল বিদ্যুৎ। সেই বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে দীর্ঘ ক্ষণ অন্ধকার হয়ে থাকল কলকাতা। রেহাই পায়নি রাজভবন, শিয়ালদহ-সহ বিভিন্ন স্টেশন, হাসপাতাল, এমনকী ট্রাফিক সিগন্যালও।
ঝড়ে বিমান চলাচলও ব্যাহত হয়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, কালবৈশাখীর দাপটে রাত ৮টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা বন্ধ ছিল। সেই সময় কলকাতার আকাশে এসে গিয়েছিল অন্তত আটটি বিমান। ঝড়ের দাপটে নামতে না-পেরে সেগুলি চক্কর কাটতে থাকে। ৯টার পরে বিমানগুলি একে একে নামে। কলকাতা থেকে দিল্লি ও মুম্বই রুটে ব্যাহত হয় বিমান চলাচল।
বিক্ষিপ্ত ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য জেলাতেও। ঝড়ে ঘরের চালের টিন উড়ে এসে গলায় ছুরির মতো বসে যাওয়ায় এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন হাওড়া-সাঁকরাইলের ধুলাগড়ে। পুলিশ জানায়, ওই ব্যক্তি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখনই টিন উড়ে এসে আঘাত করে তাঁকে। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। গভীর রাত পর্যন্ত মৃতের পরিচয় জানা যায়নি।
এ দিন ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, ২০০০ সালের পরে কলকাতায় এত বেশি গতিবেগের কালবৈশাখী এই প্রথম হানা দিল। ৩১ মার্চের ঝড়ের বেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৪ কিলোমিটার। ঝড়বৃষ্টিতে দিনভর গরমের অস্বস্তি কিছুটা কেটেছে ঠিকই। কিন্তু বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে ভুগতে হয় নগরবাসীকে। ঘরমুখো মানুষজন বিপাকে পড়েন। সিইএসসি সূত্রে বলা হয়, ঝড়ের দাপটে কসবা ও মাঝেরহাট সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তার জেরেই একের পর এক সাবস্টেশন বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। এক সময় দেখা যায়, কলকাতার বড় একটা অংশ অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে। রাজভবন থেকেও উধাও বিদ্যুৎ। তবে ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায় বলে সিইএসসি-কর্তৃপক্ষের দাবি।
ঝড়ের দাপটে রেলের হাওড়া শাখায় বিদ্যুতের ওভারহেড তার ছিঁড়ে যায়। তার জেরে বেশ কিছু ক্ষণ ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। রাতের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় রাজভবনের ভিতরের অস্থায়ী একটি মঞ্চও। ওই মঞ্চ তৈরি হয়েছিল রাজভবনের কর্মীদের রিক্রিয়েশন ক্লাবের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন সস্ত্রীক ওই অনুষ্ঠান দেখতে গিয়েছিলেন। ঝড় ওঠার কিছু পরে তিনি সস্ত্রীক রাজভবনের ভিতরে চলে যান। ঝড় থামার পরে ফের মঞ্চস্থলে যান রাজ্যপাল। খোঁজ নেন, রাজভবনের কেউ মঞ্চের তলায় চাপা পড়েছেন কি না। তবে রাজভবন সূত্রের খবর, কেউ আহত হননি।
ঝড়ে গাছ পড়ে কেশব সেন স্ট্রিটে এক বাড়ির বাসিন্দা আহত হয়েছেন। বিভিন্ন রাস্তায় গাছ পড়ে যান চলাচল ব্যাহত হয়। গাছ পড়ে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল প্রবেশপথও বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ে টিনের চাল উড়ে যায় বিভিন্ন বস্তি এলাকায়। লন্ডভন্ড হয়ে যায় ছোট ছোট দোকান। |