ছেলে, মেয়েকে নিয়ে রাতে শুয়েছিলেন এক দম্পতি। হঠাৎই জানলা দিয়ে বোমা পড়ে ঘরের মধ্যে। চার জনেই তাতে গুরুতর আহত হন। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনার পরে বহরমপুর থানা এলাকার পোল্লাডাঙা গ্রামের রফিক শেখ নামে ওই ব্যক্তির পরিবারের চার জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই পরে মারা যান রফিক শেখের কন্যা নাসরিন পারভিন (১৪)। পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে পাকাঘরের ভিতরে শুয়ে ছিলেন রফিক শেখ। রাত তিনটে নাগাদ খোলা জানালা দিয়ে ঘরের ভিতরে বোমা ছুড়েছে কেউ।”
বিঘা দু’য়েক জমিতে চাষ করে ও লরির মাল খালাসের মজুর খেটে ৫ সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী মিলে মোট ৭ জনের সংসারের কোনও মতে রুটিরুজি জোটান বছর পঁয়ত্রিশেকের রফিক। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন যে, এক মহিলার সঙ্গে তাঁর বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রফিকের দাবি, ওই মহিলার সঙ্গে তিনি এখন আর কোনও সম্পর্ক রাখতে চাইছিলেন না। কিন্তু তা ওই মহিলা মেনে নিতে পারেননি। তিনি বারবার ফোন করে তাঁকে ডেকে পাঠতেন। মহম্মদ রফিক বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অনেক বার আমাকে ফোন করেছে ওই মহিলা। ওর সঙ্গে আমার অনেক দিন ধরে সম্পর্ক নেই। তবুও সে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ত্যাগ করে তার কাছে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি তার কাছে না গেলে ওই রাতেই আমাদের খুন করে শেষ করে দেবে বলেও ফোনে হুমকি দেয়।” রফিক বলেন, “তবুও মুখে যা-ই বলুক, আমাকে ও আমার ছেলেমেয়েদের সে খুন করবে বলে কল্পনা করতে পারিনি। তাই দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে জানালা খুলে শুয়ে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত ঘরের ভিতরে বোমা ছুড়ে আমার মেয়েকে খুন করল। আমার চার বছরের শিশুটিও মৃত্যুর মুখে।” ওই মহিলার অবশ্য কোনও খোঁজ মেলেনি।
রফিক শেখের অন্য তিন সন্তান দোতলার ঘরে ঘুমিয়েছিল। একতলার ঘরে দুই সন্তান নিয়ে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী শুয়েছিলেন। রফিক শেখের স্ত্রী আরিফা বলেন, “রাত সাড়ে ১১টায় হুমকি ফোন করে রাত ৩টেয় ওই মেয়েই আমাদের খুন করার জন্য খোলা জানালা দিয়ে ঘরের ভিতরে বোমা ছুঁড়েছে।” পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘মহম্মদ রফিক শেখের সঙ্গে এক মহিলার বিবাহ বহির্ভূত সর্ম্পক ছিল। তবে সেই ঘটনারই জেরে, নাকি অন্য কোনও শত্রুতার কারণে রফিক শেখের বাড়িতে বোমা ফেলা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।” |