হাসপাতালের মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার, কর্তব্যরত নার্স এবং পাঁচ নিরাপত্তা কর্মীমঙ্গলবার মুর্শিদাবাদের তারাপুর হাসপাতালে লাঠিসোঁটা নিয়ে যাঁরা সাংবাদিক নিগ্রহ কিংবা মারধরে পরোক্ষ মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত ছিলেন, সেই সাত জনের কাউকেই গ্রেফতার করল না পুলিশ।
বুধবার অভিযুক্তেরা সকলেই কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রকের ওই হাসপাতালে কাজে যোগ দিলেও স্থানীয় সমশেরগঞ্জ থানা তাদের ডেকে পাঠিয়ে জেরা করারও প্রয়োজনই মনে করেনি। জঙ্গিপুরের মহকুমা পুলিশ অফিসার উইনডেন ভুটিয়া অবশ্য দাবি করেন, অভিযুক্তদের মধ্যে হাসপাতালের মুখ্য মেডিক্যাল অফিসার অমিতাভ মুখোপাধ্যায়কে তিনি নিজের দফতরে ডেকে পাঠিয়ে ছিলেন। সোমবারের ঘটনা নিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তবে যাঁরা সরাসরি সাংবিদকদের পিটিয়েছে সেই নিরাপকত্তাকর্মীদের ডেকে জেরা করার কোনও কারণ দেখেননি পুলিশ কর্তারা। কেন? মহকুমা পুলিশ অফিসার বলেন, “তদন্ত তো এখনও শেষ হয়নি। আমরা সব দিকই খোলা রেখে তদন্ত করছি।” কিন্তু ওই নিরাপত্তা কর্মীরা অমিতাভবাবুর নির্দেশে চিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া কিংবা আছড়ে ল্যাপটপ ভাঙচুরের মতো কাণ্ড ঘটালেও তাদের গ্রেফতার করা হল না কেন? উত্তর মেলেনি। ছিনতাই করে নেওয়া ক্যামেরার হদিসও মেলেনি। সে ব্যাপারেও নির্বিকার গলায় ওই পুলিশ কর্তা বলেন, “মনে হচ্ছে ক্যামারাটা হাসপাতালে নেই। বাইরে চলে গেলে তো পাওয়া মুস্কিল।” জেলা পুলিশ সুপার হুমায়য়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “সমশেরগঞ্জ থানাকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবুও কেন গ্রেফতার করা হল না তা খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
আহত চার সাংবাদিককে অবশ্য জঙ্গিপুর হাসপাতাল থেকে এ দিনও ছাড়া হয়নি। চিকিৎসকেরা জানান, ওই চারজনকেই আপাতত পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্যালাইনও চলছে। আনন্দবাজারের চিত্র সাংবাদিক অর্কপ্রভ চট্ট্যোপাধায়ের আঙুল ভেঙে গিয়েছে। এ দিনও তাঁর যন্ত্রণা কমেনি। জ্বরও রয়েছে।
তারাপুর হাসপাতালের ঘটনায় এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “কোনও বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে সমালোচনা হলে তা বিরোধিতা বলে ভেবে নেওয়াটা ভুল। ওই সমালোচনা থেকে নিজেকে সংশোধন করা উচিত। আমার তো মনে হয় ওই দৃষ্টিভঙ্গিতে সংবাদমাধ্যমের সমালোচনাকে দেখা উচিত।” মৎসা দফতরের প্রতিমন্ত্রী এবং মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুব্রত সাহা। তিনি বলেন, “অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।” ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক কংগ্রেসের মইনুল হক বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই শুনছিলাম ওই হাসপাতালে গুণ্ডারাজ চলেছে। এ বার তাই প্রমানিত হল।” স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক তোয়াব আলিও বলেন, “হাসপাতালে দালাল রাজ চলছে। সাংবাদিকদের সামনে তা এসে পড়ার ভয়ে ওঁদের মারধর করা হয়েছে।” |