মহিলাদের সঙ্গে বৈঠক সুতিতে
টুকটুকিদের দেখে মুগ্ধ মহিলা কমিশনের সদস্য
নাবালিকা বিয়ে রুখে দিয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন টুকটুকি খাতুন, মল্লিকা খাতুন। মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকের কাশিমনগর পঞ্চায়েত এলাকায় টুকটুকি-মল্লিকাদের সংখ্যা বাড়ছে, নিজের চোখে তা দেখে গেলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য-সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী।
বুধবার সকালে অনিতাদেবী বহরমপুরে আসেন। এর পরে বহরমপুর সার্কিট হাউসে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি চলে যান সুতির কাশিমনগরে। সেখানকার পঞ্চায়েত অফিসে এলাকার বিভিন্ন স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মহিলা, স্বাস্থ্যকর্মী, পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনে নেন টুকটুকি-মল্লিকাদের গড়ে তোলার কাহিনিও।
তিনি বলেন, “এত দিন ভিডিও কনফারেন্স বা রিপোর্ট পড়ে ওই কর্মকাণ্ডের কথা জেনেছি। কিন্তু এলাকায় এসে স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হলো। দিল্লিতে ফিরে গিয়ে আমি রিপোর্ট জমা দেব।
বুধবার মুর্শিদাবাদের সুতি ও বহরমপুর ঘুরে গেলেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য সচিব অনিতা অগ্নিহোত্রী।
কথা বললেন জেলাশাসক রাজীব কুমার ও পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
আগামী দিন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতে ওই মডেল ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে কথা ওই রিপোর্টে অবশ্যই উল্লেখ করব।”
সেই সঙ্গে গ্রামের স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মহিলারা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে যাতে এককাট্টা হয়ে শিশু ও মায়েদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন সে ব্যাপারেও রাজ্য সরকারকে লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ করবেন তিনি বলে এ দিন জানান অনিতাদেবী।
ওই এলাকায় শিশু সংসদ তৈরি হয়েছে। যাঁরা পঞ্চায়েতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষার মর্যাদা আদায় করেছে। এমনকী শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষায় ওই পঞ্চায়েত তাদের চলতি আর্থিক বাজেটে ৬ লক্ষ টাকাও বরাদ্দ করেছে।
অনিতাদেবী বলেন, “এই উদাহরণ অন্য কোনও পঞ্চায়েতে আছে কিনা আমার জানা নেই। শিশু-কিশোরদের অধিকার রক্ষায় একটা পঞ্চায়েত অর্থ বরাদ্দ করেছে শুধু নয়, শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে তারা সমাধান করারও চেষ্টা করে।”
গত ২০০৮ সাল থেকে মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকের কাশিমনগর পঞ্চায়েত এলাকার ১১টি সংসদ এলাকায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সিনি’র উদ্যোগে ওই কর্মকাণ্ড চলছে। শিশু ও নারী সহায়ক সমাজ (চাইল্ড অ্যান্ড উওমেন ফ্রেন্ডলি কমিউনিটি) প্রকল্পের অধীনে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় শিশু ও মহিলাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সুরক্ষা বিষয়ের উপরে তারা নজর দেয়। ওই কাজে তারা সামিল করেছে এলাকার বিভিন্ন স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মহিলাদের। এক দিকে এলাকার ‘সামাজিক সম্পদ’-এর মানচিত্র তৈরি করছেন, অন্য দিকে গ্রাম সংসদ স্তরে শিশু ও নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও সুরক্ষার দিকেও নজরদারি চালাচ্ছে। এলাকার গর্ভবতী মহিলাদের নাম নথিভুক্ত করা থেকে নিয়মিত টিকা দেওয়া, জন্মের পরে শিশুদের নিয়মিত টিকাকরণ, শৌচাগার নেই এমন বাড়ি চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রামের কোনও বাড়িতে শিশু মৃত্যু ঘটলে তাও চিহ্নিত করে রাখছেন।
সিনি’র জেলা কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত দাস বলেন, “এ ছাড়াও ৩-৬ বছরের শিশুদের নিয়মিত অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠানো থেকে কোনও বাড়িতে অপুষ্টি শিশু রয়েছে তা চিহ্নিতকরণের কাজটিও করেন স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মেয়েরা। ওই কাজের উন্নতির জন্য ১৫ দিন অন্তর তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে হাজির থাকেন ‘আশা’ কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী, পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রামোন্নয়ন সমিতির সদস্যরাও।”
এর পাশাপাশি ২০১০ সালের মার্চ থেকে পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরের দফতরের উদ্যোগে জন উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকল্পও চলছে ন্যাশনাল রুরাল হেল্থ মিশনের আর্থিক সহায়তায়। ১০-১৬ বছর বয়সী ২০-২৫ জনকে নিয়ে সংসদ এলাকাপিছু শিশুবন্ধু দল যেমন তৈরি করা হয়েছে, তেমনি সংসদ এলাকাপিছু এক জন করে ছেলেমেয়ে নিয়ে ১১টি সংসদ থেকে ২২ জনকে নিয়ে শিশু সংসদ তৈরি করা হয়েছে। যারা শিশু-কিশোরদের সমস্যা তুলে ধরছে পঞ্চায়েতে। সমাধানের সম্ভাব্য দিকগুলো লিখে জমাও দেয়।
ভারপ্রাপ্ত সমাজকল্যাণ আধিকারিক অনিন্দ্যনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক সরকারি ব্যবস্থার সঙ্গে সদৃঢ় যোগাযোগ গড়ে তোলার মাধ্যম হিসেবে স্বয়ম্বর গোষ্ঠীর মেয়েরা কাজ করছে বলেই ওই পঞ্চায়েতে সাফল্য মিলেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.