আরবিল-২ (আমজেদ, রাজাক)
ইস্টবেঙ্গল-০ |
পাহাড়ি শহর আরবিল বাগদাদের তুলনায় অনেক ঠাণ্ডা। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড, সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি। কলকাতায় সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২৬। আর্দ্রতার ফারাকও বিশাল।
ইরাকিরা কলকাতা এসে হিসেব কষে দেখেছিলেন, ম্যাচের প্রথমার্ধটা মারাত্মক গরম থাকবে। বিরতির পরে আর্দ্রতা, তাপমাত্রা কমবে। সব দৌড়, সব দম ওই সময়ের জন্য রেখে দেওয়া ভাল। রাই ধৈর্যং, রহু ধৈর্যং।
ওই ধৈর্যর অঙ্কেই তারা এ এফ সি কাপে ইস্টবেঙ্গলের মশাল নিভিয়ে দিয়ে গেল। আলোকশিখা নেভানোর ফুঁশেষ পনেরো মিনিটে। রোদ্দুরের তেজ কমতেই ইরাকিদের ফুটবলে উত্তাপ বাড়ল।
প্রথমার্ধটা তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, আই লিগের মাঝারি সারির দল। পুণে এফ সি বা স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া। টোলগে-পেনের পায়ের কারুকার্যে, রবিন-বলজিতের জায়গা বদলে, রাজুর থ্রো ইনে ইরাকিরা তখন রীতিমত অসংবৃত। জল খাওয়ার জন্য কী হাঁক পাক! পড়ে যাচ্ছেন। মন্থর। দুটোর বেশি পাস হচ্ছে না।
বিরতির পরে দুই ফুটবলারের সঙ্গে ছক, স্ট্র্যাটেজি বদল করলেন আরবিল কোচ। ধৈর্যের খেলায় ফরোয়ার্ড বাড়িয়ে ৪-৩-৩। ওই যে রাই ধৈর্যং, রহু ধৈযর্ং! তারপরেই ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ ও রক্ষণে প্রচুর ফাঁকা জায়গা বেরোতে লাগল। সোলো রান, উইং প্লে, ওয়াল পাসের ঝরনাধারা দেখে বোঝা যেতে লাগল, সাদ্দাম-পতনের পরে কেন দ্রুতগতিতে উঠে দাঁড়িয়েছে সে দেশের ফুটবল। কেন তারা গত আট বছরে অলিম্পিকে চতুর্থ, এশিয়াডে রানার্স, এশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন। |
০-২ ম্যাচটার পরে ট্রেভর মর্গ্যানের আক্ষেপ বেরিয়ে এল। বলেই ফেললেন, “টোলগেকে প্রথম থেকে না খেলালে ভাল হত। মানসিক ভাবে তৈরি ছিল না।” টালমাটাল টোলগেকে দেখে বোঝাই গেল। কফিশপ, মল যেখানেই যান, অস্ট্রেলিয়ান তারকাকে একটা প্রশ্নের সামনে পড়তে হচ্ছে এখন। মোহনবাগানে যাচ্ছেন?
টেনশনাক্রান্ত টোলগে এই ম্যাচটায় যথারীতি অনন্য ভঙ্গিতে যাচ্ছিলেন অ্যাটাকিং থার্ডে। গোলের সামনে গিয়েই ভারতীয় স্ট্রাইকারদের মতো তালকানা। চোখে দেখা যায় না, এমন দুটো মিস করলেন। সব মিলিয়ে গোটা পাঁচেক। ম্যাচটার পরে তাঁর নামে লাল হলুদ গ্যালারিতে গালাগালির বন্যা। এই প্রথমবার।
আর হ্যাঁ, অন্য দর্শনীয় ব্যাপারও ছিল। জর্ডনের ম্যাচ কমিশনার অতীতে যুবভারতীর মাঠে সাপ দেখায় খেলা বন্ধ করেছিলেন। এ বার দেখলেন, খেলা চলাকালীনই দুটি কুকুর মাঠে ঘুরে বেড়াল কিছুক্ষণ।
উনিশ বছর আগে ইরাকি ক্লাব আল জাওরাকে ৬-২ হারিয়েছিল স্বদেশি ইস্টবেঙ্গল। এই ম্যাচটার স্কোর হতে পারত ৬-৫। সন্দীপ নন্দী দুটো দুর্দান্ত সেভ করলেন। একটা বাঁচাল পোস্ট। ইনজুরি টাইমে, প্রতি আক্রমণে উঠে ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সকে রক্তাক্ত করে ২-০। রক্ষণে কেউ ছিলেন না তখন।
আরবিলের সিরিয়ান কোচ ২৬ বছর আগে নেহরু কাপের ভারতকে দেখে গেছেন। তাঁর বিশ্লেষণ, “ভারতীয়রা আগে অনেক স্কিলফুল ছিল। তবে এখন আবার বিদেশিদের সঙ্গে খেলে সংগঠন ভাল হয়েছে।” ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ও মাঝমাঠ সংগঠন প্রথম দিকে ভাল ছিল। ক্রমশ সূর্যের আলো যত কমতে লাগল, জমাট ভাবও কমতে লাগল ইস্টবেঙ্গলের। আরবিল কোচ প্রশংসা করে গেলেন টোলগে, পেন, সঞ্জু, রবিনের। কিন্তু তাঁদের এ দিনের ফুটবল তো ৭৫ মিনিটের। চুনী-পিকের আমল হলে টোলগে-পেনরা মাঠ ছাড়তেন হাসতে হাসতে। ম্যাচটা ড্র হত, ইস্টবেঙ্গল স্যালাইন নিয়ে বেঁচে থাকত এএফসি কাপে।
স্যালাইন খুলে নিতে হল।
কী করা যাবে? কলকাতা লিগে না হয় কুড়ি বছর আগেও ৭০ মিনিটের ফুটবল হত। তার আগে ছিল ৫০ মিনিটের লিগ। সারা বিশ্বে তো প্রায় দেড়শো বছর ধরে ৯০ মিনিটের ফুটবল!
ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, সৌমিক, ওপারা, রাজু, নির্মল, হরমনজিৎ (রবার্ট), সঞ্জু (মেহতাব), পেন, বলজিৎ (এডমিলসন), টোলগে, রবিন। |