মহমেডান মাঠের কেকেআরের টিকিট কাউন্টারে পরিচিত ভিড়টা নেই। সাপের মতো এঁকেবেঁকে লাইন যায়নি রেড রোডের দিকে। বিকেল পাঁচটাতেও ঝিমোচ্ছে ঘোড়সওয়ার পুলিশ। হাই তুলছে বাদামওয়ালা।
ইডেনের চারপাশে যথারীতি বিশাল বিশাল বাঁশের ব্যারিকেড। গেটের নির্দেশিকা। ইডেন? তার এখন দু’টো রঙ। সোনালির হাত ধরে বেগুনি। কেকেআরের রং। রাত পোহালেই নাইটরা নেমে পড়ছে দিল্লির ‘ডেয়ারডেভিল’দের সঙ্গে টক্করে। এসে পড়ছে আইপিএল ফাইভ। চব্বিশ ঘণ্টাও বাকি নেই মাঠে প্রথম বল পড়তে। বীরু বনাম গোতি। ইউসুফ বনাম ইরফান। ম্যাকালামের হাতের উল্কি। কিং খানের ফ্লাইং কিস...।
সামনে পড়ে জিভে জল আনা বিনোদনের ‘বুফে’, কিন্তু লোকে যে পাত পেড়ে চেটেপুটে খাবে তার নিশ্চয়তা নেই। মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখা বা ড্রয়িংরুমে বসে এলসিডি টিভির আরাম বিসর্জন দিয়ে কলকাতা নাইটদের ম্যাচে ইডেন ভরাবে এমন গ্যারান্টি সিএবি কর্তারাও দিতে পারছেন না। বরং বলা হচ্ছে, “লোকজন যা হবে ৫ মে। সৌরভ ভার্সাস কেকেআরের দিন। বাকি ম্যাচে ইডেন পুরো ভরবে বলে তো মনে হয় না।” তার উপর থাকছে আবহাওয়ার চোখরাঙানি। বুধবার রাতের কালবৈশাখী আজ ফের ইডেনে আছড়ে পড়ার আশঙ্কাও তো ইউসুফের ছক্কার মতো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কুড়ি-বিশের মারকাটারি ক্রিকেটে খেলা ছাড়াও থাকছে মন ভরানোর নানা অনুসঙ্গ। আজ বৃহস্পতিবার ইডেনে চমক বলতে রূপম ইসলাম ও তাঁর ব্যান্ড ফসিলস। হিট গানগুলো ছাড়াও ‘করব, লড়ব, জিতব রে’ সম্পূর্ণ নিজস্ব স্টাইলে গাইবেন রূপম। এই প্রথম আইপিএলের মঞ্চে তিনি। “ভীষণ উত্তেজিত। ছোটবেলা থেকে খেলা দেখতে ইডেনে যাই। কিন্তু কেকেআরের জন্য গান গাওয়া এই প্রথম,” রাতে আনন্দবাজারকে বলছিলেন রূপম। শুধু এই অনুষ্ঠানের জন্য নতুন গান বেঁধেছেন। ‘কলকাতা আহা’ আজ ইডেনে যা রূপমের ইউএসপি। শুধু তাই নয়, ম্যাচ শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে তুলে আনা হচ্ছে বাংলার সংস্কৃতি। থাকবে পুরুলিয়ার ছৌ নাচ। আর বলিউডি হিটের পাশাপাশি যদি ডিজে বাজিয়ে দেন জুতসই রবীন্দ্রসঙ্গীত, অবাক হবেন না। নাইটদের ক্লাসও তো নানা রঙে রঙিন। কোথাও কোচ ট্রেভর বেলিস প্র্যাক্টিসে ব্ল্যাকবোর্ড ঝুলিয়ে দিচ্ছেন প্রত্যেকের জন্য আলাদা টার্গেট। বোলারের বেলায় এক রকম। ব্যাটসম্যানের বেলায় অন্য। কখনও আবার নাইট কর্তাকে সঙ্গী করে গৌতম গম্ভীর ছুটছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার ঘরে। উদ্দেশ্য? পছন্দের পিচ চাই। কেমন হল ইডেনের পিচ? চরিত্রটা কী দাঁড়াচ্ছে? জিজ্ঞেস করলে পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সহাস্য রসিকতা, “উইকেটের ক্যারেক্টার? লুজ ক্যারেক্টার হবে না!” উইকেট যা-ই হোক, নাইটরা খুঁজে চলেছে একটাই ‘পাসওয়ার্ড’। গল্পটা হল, সহবাগ থামাও এবং ম্যাচ নিয়ে যাও। ওয়ার্নার-পিটারসেন-জয়বর্ধনে-রস টেলর নেই, এই সুযোগ কেউ ছাড়ে নাকি? বেলিস আবার সন্ধেয় শুনিয়ে গেলেন, “আমার বাঁ-হাতি ক্যাপ্টেন আবার সহবাগকে একটু-আধটু চেনে!” ওপেনিংয়ে কে? কালিসের সঙ্গে ম্যাকালাম? না, ম্যাকালামের সঙ্গে গম্ভীর? এ বার মুচকি হেসে বেলিসের জবাব, “অন্য কেউও হতে পারে।”
গত বার কোটলায় দিল্লি ম্যাচ একা বের করে দিয়েছিলেন মনোজ। করেছিলেন ৪৭ বলে ৬১। প্র্যাক্টিসে যে ভাবে ব্রেট লি-কে ওড়াচ্ছিলেন, ইডেনে কিন্তু সেই ঝড়ের পূর্বাভাসও রইল!
|
একই সঙ্গে তৃপ্তি এবং আশঙ্কা। আইপিএল ফাইভের উদ্ধোধনী ম্যাচের পর এটাই মুম্বই ইন্ডিয়ান্স শিবিরের ছবি। চেন্নাই সুপারকিংসকে আজ ১৯ বল বাকি থাকতে, আট উইকেটে হারিয়ে মুম্বইয়ের বড় জয়ের দিনেই সচিন তেন্ডুলকর আঙুলে চোট পেলেন। চেন্নাইয়ের ইনিংস ১১২ রানে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে মুম্বইয়ের হয়ে দুর্দান্ত শুরু করেন রিচার্ড লেভি (৩৫ বলে ৫০)। মুম্বইয়ের প্রথম উইকেট পড়ে ৬৯ রানে। এর পরেই বোলিঞ্জারের শর্ট বলে আঙুলে চোট পান সচিন। মাঠ থেকেও বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। মুম্বই শিবিরের তরফে সচিনের সুস্থতা নিয়ে রাত পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। চেন্নাইয়ের উইকেটে ম্যাচের সেরা লেভি ছাড়া কাউকেই স্বস্তিতে দেখায়নি। ধোনিদের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেন সুরেশ রায়না (৩৬)। মুম্বইয়ের হয়ে দুটো করে উইকেট পান প্রজ্ঞান ওঝা, মালিঙ্গা এবং পোলার্ড। |