রীতিমতো উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে শুরু হল উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরে যমুনা নদী সংস্কারের কাজ। বুধবার সকালে চারঘাট পঞ্চায়েতের টিপিতে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাধরী বেসিন ড্রেনেজ ডিভিশনের আধিকারিক বরুণ দাস, স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী, রমেন সর্দার প্রমুখ।
মহকুমা ও ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় মাটি কাটার জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে স্থানীয়রাই এই মাটি কাটার কাজ করবেন। প্রথম পর্যায়ে বর্ষার আগে আপাতত দেড় কিলোমিটার অংশে কাজ হবে বলে জানা গিয়েছে।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ মোল্লাডাঙা এবং টিপির কাছে ইছামতী, পদ্মা এবং যমুনা ওই তিন নদীর মোহনার দিক থেকে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়। প্রায় এক হাজার পুরুষ ও মহিলা ঝুড়ি ও কোদাল নিয়ে মাটি কাটতে লেগে পড়েন। কাজ চলবে সগুনা এবং চারঘাট অঞ্চলের কপিলেশ্বর, দিয়ারা, তেপুলমির্জাপুর, লবণগোলা ইত্যাদি অঞ্চলে। আপাতত নদীতে দেড় কিলোমিটার অন্তর একটা করে বাঁধ দিয়ে জল আটকে কাজ করা হবে। |
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এই তিন নদী স্বরূপনগরের কিছু এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষত বর্ষাকালে। বর্তমানে যমুনা নদীর প্রস্থ ২৫ ফুটের মতো। নদী ভরে গিয়েছে পলিতে। ফলে প্রতি বর্ষায় নদী উপচে যায়। ঘরবাড়ি নষ্ট হয় তো বটেই তার সঙ্গে বড় রকমের ক্ষতি হয় ফসলের। এর মধ্যেই আবার এক শ্রেণির মানুষ যেখানে সেখানে নদীর পাড় দখল করে ধান এবং সবজি চাষ করছেন। ফলে কমে যাচ্ছে নদীর নাব্যতাও। সেই কারণে এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই নদীর দু’ধারে অবৈধ দখলদারি তুলে দিয়ে সংস্কারের দাবি করছিলেন।
আধিকারিকেরা জানান, সংস্কারের পর নদীর প্রস্থ মোহনার দিকে বেড়ে হবে ১৫০ ফুট এবং বাকি নদীর প্রস্থ হবে ১০০ ফুটের মতো।
সম্প্রতি চারঘাট পঞ্চায়েতের চারঘাট মিলনমন্দির বিদ্যালয়ে সর্বদলীয় এক সভায় যমুনা সংস্কারের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষে টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী।
এ দিন কাজ শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয় মানুষ। তাঁরা আরও খুশি মাটি কাটার কাজ মেলায়। স্থানীয় পরান মণ্ডল, কল্পনা দাস, আবু বক্কর গাজিরা বলেন, “কাজের কাজ কিছুই হয়নি এতদিন। প্রতিবার বর্ষায় বাঁধের উপর আশ্রয় নিতে হত আমাদের। এখন সংস্কারের কাজ শুরু হওয়ায় ভাল লাগছে।”
নারায়ণবাবু বলেন, “সংস্কারের কাজ যাতে কোনওভাবেই বাধা না পায়, তাই সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে সকলের মতামত নিয়েই কাজ শুরু করা হয়েছে। যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই একশো দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করানো হবে। ফলে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। রক্ষা পাবেন বর্ষার হাত থেকেও।” |