নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্রীরামপুর |
বামফ্রন্টের দুই শরিক সিপিআই এবং সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে গোলমালের জেরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে হুগলির শ্রীরামপুরের ওয়েলিংটন জুটমিলে।
সিপিআইয়ের শ্রমিক নেতাকে সিটুর লোকজন মারধর করেছে, এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে জানুয়ারি মাসের শেষ দিক নাগাদ দুই সংগঠনের মধ্যে গোলমালের সূত্রপাত। সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র অভিযোগ, সিটুর সঙ্গে মিল কর্তৃপক্ষের ‘অসাধু আঁতাত’-এর জেরে প্রহৃত ভোলানাথ কর্মকারকে ‘অনৈতিক’ ভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অথচ, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সিটু নেতৃত্বকে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন এআইটিইউসি নেতৃত্ব। সিটু নেতৃত্বের তরফে অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ভোলানাথবাবু মিলের এআইটিইউসি-র সম্পাদক তথা প্রভিডেন্ট ফান্ড ট্রাস্টির নির্বাচিত সদস্য। তিনি মিলের প্রিপেয়ারিং বিভাগের ড্রয়িং সেকশনের কর্মী। মিল সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে এক শ্রমিককে কাজে নেওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
সিটু ওই শ্রমিকের পরিবর্তে তাদের ‘পছন্দসই’ অন্য এক শ্রমিককে কাজে নেওয়ার দাবি জানায় বলে অভিযোগ। ভোলানাথ কর্মকার সিটু নেতাদের ওই দাবির প্রতিবাদ করেন। সে কারণেই সিটু নেতা এবং সমর্থকেরা ভোলানাথবাবুর উপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। ভোলানাথবাবুর দাবি, মিলের সিটুর যুগ্ম সম্পাদক-সহ কয়েকজন নেতা দলবল নিয়ে তাঁকে মারধর করেন। তিনি বলেন, “আমাকে ওরা কিল, চড়, ঘুষি, লাথি মারতে থাকে। আমি জ্ঞান হারাই। মিলের লেবার অফিসার সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি হামলাকারীদের কিছুই বললেন না।” কয়েক জন শ্রমিক তাঁকে উদ্ধার করে মিলের ডিসপেনসারিতে নিয়ে যান। পরে তাঁকে শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সিটুর লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন ভোলানাথবাবু।
এ দিকে, ঘটনার পরে প্রহৃত ভোলানাথবাবুকেই সাসপেন্ড করেন মিল কর্তৃপক্ষ। আসিফ আলি নামে অন্য এক শ্রমিকেরও একই পরিণতি হয়। মিল সূত্রের খবর, জখম ভোলানাথবাবুকে মিলের ডিসপেনসারিতে নিয়ে গিয়েছিলেন আসিফ। ভোলানাথবাবু বলেন, “আসিফ আমার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় ওকেও বের করে দেওয়া হল। আমাদের ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক প্রাণেশ বিশ্বাসের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। সাসপেন্ড করার আগে শো-কজও করা হয়নি আমাদের।” এআইটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি তথা ফেডারেশন অফ চটকল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস দত্ত বলেন, “যারা অন্যায় করল, তারা বহাল তবিয়তে মিলের ভিতরে রইল। অথচ যাদের উপর অত্যাচার করা হল, তাদেরই বেআইনি ভাবে গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হল। কর্তৃপক্ষের এই জুলুম আমরা মেনে নেব না।” সিটুর বিরুদ্ধে অবশ্য সরাসরি মুখ খোলেননি তিনি। শুধু বলেন, “কারা এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, সবাই জানে।”
আক্রমণকারীদের গ্রেফতার এবং সাসপেন্ড হওয়া দুই শ্রমিককে অবিলম্বে কাজে নেওয়া দাবিতে আন্দোলনে নামে এআইটিইউসি। ওই সংগঠনের তরফে এ নিয়ে গেটসভা, মিছিল, অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। কয়েক দিন আগে মিলের গেটে অনশনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। গোলমালের আশঙ্কায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কারণ দেখিয়ে প্রশাসন সেই অনুমতি দেয়নি।
ঘটনার ব্যাপারে সিটুর জেলা সম্পাদক দিলীপ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “ঘটনার কথা শুনে আমরা সংগঠনগত ভাবে তদন্ত করেছিলাম। অভিযুক্তদের মধ্যে যাঁরা আমাদের দলের, তাঁদের জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তাঁরা কিন্তু অভিযোগের কথা মানেননি।” দিলীপবাবুর দাবি, “প্রহৃতদের মিল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, এমনটা আমি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের সঙ্গেও কথা বলব।” |