গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় • সাহাগঞ্জ |
সাহাগঞ্জে ডানলপ কারখানার হালহকিকত খতিয়ে দেখল কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত ‘স্পেশাল অফিসার’-এর নেতৃত্বে একটি দল। বুধবার বিকেলে অফিসারেরা যখন কারখানা চত্বরে, তখনই হাতে লেখা একটি নোটিসে ডানলপ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিলেন, শ্রমিকদের এক মাসের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। যদিও কারখানা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত খুশি করতে পারেনি শ্রমিকদের।
ডানলপকে ইতিমধ্যেই লিকুইডেশনে পাঠিয়েছে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। সাহাগঞ্জ ইউনিটের সম্পত্তি বিক্রি করে পাওনাদারদের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা। সেই কাজ খতিয়ে দেখতে নিযুক্ত হয়েছেন ‘স্পেশাল অফিসার।’ ইতিমধ্যে, রুইয়া গোষ্ঠী ডানলপ কারখানা খুলতে চেয়ে রাজ্য সরকারের ‘সহযোগিতা’ চেয়েছে। দু’টি শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকও করেছে। শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর সঙ্গে ফোনে কথাও হয়েছে রুইয়া গোষ্ঠীর কর্ণধার পবন রুইয়ার। যদিও কারখানা খুলতে চেয়ে রুইয়ারা ঠিক কী করতে চান, তা স্পষ্ট নয় বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন পূর্ণেন্দুবাবু। এ দিন কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রায় ৮০০ শ্রমিককে এক মাসের (মার্চ) বেতন দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা শুনে শ্রমমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “আমরা চেয়েছি কারখানা খুলুক। শ্রমিকদের বকেয়া অনেক। শুধু এক মাসের বেতন দেওয়া কাঙ্ক্ষিত নয়।’’
কারখানা কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে শ্রমিকেরাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেননি। তাঁদের প্রতিক্রিয়া, “গত চার মাস ধরে মাইনে না পেয়ে এ ক’টাকা আমাদের কাছে অনেক। কিন্তু কারখানা খোলার পাকাপাকি ব্যবস্থা হবে কি?” এ ক্ষেত্রে স্পেশাল অফিসারের উপরেই তাঁরা বেশি আস্থা রাখছেন। কারখানার তিনটি ইউনিয়নের সম্মিলিত ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি’র আহ্বায়ক বিদ্যুৎ রাউত বলেন, “যেখানে কর্মীদের লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া, সেখানে সামান্য এক মাসের বেতন নিয়ে শ্রমিকদের কতটা উপকার হবে?”
হাইকোর্ট নিযুক্ত স্পেশাল অফিসার কে আনন্দ রাওয়ের নেতৃত্বে এ দিন পাঁচ জনের দলটি যখন ডানলপ পৌঁছয়, তখন বিকেল ৫টা। সকাল থেকেই অধীর আগ্রহে তাঁদের প্রতীক্ষায় ছিলেন শ্রমিকেরা। ঘণ্টা দু’য়েক ধরে কারখানার বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন অফিসারেরা। বিল না মেটানোয় কারখানা চত্বরে বিদ্যুৎ সংযোগ আগেই কেটে দেওয়া হয়েছিল। অন্ধকার নেমে আসায় টর্চ জ্বেলেই ঘুরতে হয় তাঁদের।
মহম্মদ আলম, শশধর হাজরা, অনুপ রায়দের মতো শ্রমিকদের একটাই প্রশ্ন, বকেয়া টাকা কবে পাবেন তাঁরা। যা শুনে আনন্দ রাওয়ের প্রতিক্রিয়া, “মহামান্য হাইকোর্ট আমাদের এই কাজে নিযুক্ত করেছেন। তাই এখানে এসেছি। এর বেশি কিছু বলার জায়গায় আমরা নেই।” ওই দলটি জানিয়েছে, আগামী কয়েক দিন তাঁরা কারখানায় আসবেন। ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। |