উত্তরপ্রদেশে ভরাডুবির জের। রাজ্যসভা ভোটে আগ বাড়িয়ে অংশুমান মিশ্রকে সমর্থন করে দলেই একঘরে। অস্বস্তি এড়াতে দলের কোনও আনুষ্ঠানিক বৈঠকই ডাকছেন না বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। আরএসএস-ও এখন তাঁকে দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে এগোনোর পরামর্শ দিচ্ছে।
এ বছরের শেষেই সভাপতি পদে মেয়াদ ফুরোচ্ছে গডকড়ীর। সঙ্ঘ নেতৃত্ব সেই মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী। কিন্তু তার আগে গডকড়ীর একের পর এক সিদ্ধান্তের জেরে যে ভাবে তাঁর নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তাতে উদ্বিগ্ন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত। তাঁর দূত হিসেবে আজ আরএসএস নেতা সুরেশ সোনি বৈঠক করেন গডকড়ীর সঙ্গে। তাঁর টিমের সঙ্গেও আরএসএসের বৈঠক হয়। আরএসএস নেতৃত্ব চাইছেন, বিভিন্ন কৌশল রচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ে গডকড়ী দলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে এগোন, যাতে তাঁর নেতৃত্বে আঁচ না আসে। প্রয়োজনে আরএসএস নেতৃত্ব নিয়মিত বৈঠক করতে রাজি।
উত্তরপ্রদেশের ভোটে ‘তাক লাগানো’ ফল করে দলে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন গডকড়ী। লালকৃষ্ণ আডবাণী-সুষমা স্বরাজের আপত্তির পরোয়া না করেই বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে এনেছিলেন। উমা ভারতীকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার দাবিও মানতে পারেননি। দলের নেতাদের চটিয়েছেন, কিন্তু প্রত্যাশিত ফল আনতে পারেননি। যে কোনও বড় পরাজয়ের পর বৈঠক ডেকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। অথচ অস্বস্তি এড়াতে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডাকলেন না গডকড়ী। যেখানে প্রতি তিন মাসে একটি জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানে গত জুনে লখনউয়ে শেষ বৈঠক হয়েছে।
গত রাতে যদিও দলের সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন গডকড়ী। কিন্তু যে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্যায়ের পরেই ডাকার কথা ছিল, সেটি পিছিয়েই চলেছে। দলের নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ জানান, “বাজেট অধিবেশন শেষ হয়ে গেলে মে-জুনে এই বৈঠক হতে পারে।” কেন এত দেরি হচ্ছে? গডকড়ীর সাফাই, এত দিন উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন নিয়ে দল ব্যস্ত ছিল। তার পর রাজ্যসভা ভোট। সেটি শেষ হতে না হতেই এ মাসের মাঝামাঝি দিল্লিতে পুরসভার ভোট। তারও পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। ফলে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ডাকার সময়ই মিলছে না।
গডকড়ী যে আসলে মুখই লুকোচ্ছেন, তা আরও স্পষ্ট হল গত কাল। ক’দিন আগেই স্থির হয়েছিল, দিল্লি পুরভোটের আগে কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হবে। কিন্তু ভোটের টিকিট বণ্টন নিয়ে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ক্ষোভের জন্য তা বাতিল করা হয়। গত কাল দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হলেও গডকড়ী একটিও প্রশ্নের জবাব দেননি। নিজের বক্তৃতা সেরেই সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে দফতর ছাড়েন। বিজেপির এক নেতার কথায়, “একে উত্তরপ্রদেশের হার, তার উপর আডবাণী-সুষমা-অরুণ জেটলিদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া অংশুমান মিশ্রকে প্রার্থী করেও পিছু হঠা। গডকড়ীও জানেন, দলের নেতাদেরই চাপের মুখে আছেন তিনি। তার উপর মিডিয়ার মুখোমুখি হলে হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হবে!” |