জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও জরুরি পরিষেবার কাজে রাজ্য প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’ এবং পার্টির নেতাদের উদ্ধত আচরণ ও অ-কমিউনিস্ট সুলভ জীবনযাত্রার ফলেই পশ্চিমবঙ্গে জনসমর্থনে ধস নেমেছে বলে পার্টি কংগ্রেসের রুদ্ধদ্বার সভায় জানালেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট।
কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেস থেকে পশ্চিমবঙ্গে ‘ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই’য়ের ডাক দেওয়া হচ্ছে। পার্টি কংগ্রেসের আলোচ্যসূচির অন্তর্গত রাজনৈতিক দলিল, মতাদর্শগত দলিল এবং রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টেরও মূল নজর পশ্চিমবঙ্গেই। মতাদর্শগত দলিলে মূল বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠছে চিনের সমাজতন্ত্র তথা শিল্প-বিকাশের মডেল। পশ্চিমবঙ্গে বাম-সরকার যে মডেল অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিল। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্টে থাকছে পশ্চিমবঙ্গে দল ও বাম-সরকারের ভুলভ্রান্তির খতিয়ান ও সংগঠনের ফাঁকফোকর। আজ প্রথম দিন রাজনৈতিক দলিল পেশের পর দলের সভায় কারাট স্পষ্টই জানিয়েছেন, জমি অধিগ্রহণের মতো বিষয়টি গ্রামের মানুষের কাছে কতটা ‘স্পর্শকাতর’, তা বুঝতে না-পারাটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু একইসঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবায় রাজ্য প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’ও ছিল। পার্টির নেতাদের সাধারণ মানুষের প্রতি উদ্ধত আচরণ ও অ-কমিউনিস্টসুলভ জীবনযাত্রার ফলেও দলের জনসমর্থনে ধস নেমেছিল।
তবে কারাট পাশাপাশিই জানিয়েছেন, এই সব বিষয়গুলিই আগে বিজয়ওয়াড়া সম্মেলন বা হায়দরাবাদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হয়েছে। পার্টি কংগ্রেস বলে সেগুলিরই ‘পুনরাবৃত্তি’ হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম যে ‘আক্রান্ত’, সে কথা জানিয়ে গোটা দলকে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন কারাট। বলেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ হল পার্টির সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি। সেই কারণেই গত তিন বছর সেখানে আমাদের উপর হামলা হচ্ছে। গত পার্টি কংগ্রেস থেকে এখনও পর্যন্ত ৫৭০ জন বাম সদস্য-সমর্থক নিহত হয়েছেন। বিধানসভা নির্বাচনের পর হামলা আরও বেড়েছে।” পার্টি কংগ্রেসের প্রথমদিন ‘সলিডারিটি ফর বেঙ্গল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর পাশাপাশি হাজির ছিলেন কেরলের রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়ন ও ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী (আপাতত দেশের একমাত্র কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী) মানিক সরকার। বিজয়ন বলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের জমানার কথা। জমির পাট্টা কেড়ে নেওয়া, পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় হামলা ও সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘটে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন মানিকবাবু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এস আর পিল্লাই পশ্চিমবঙ্গে নিহতদের দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করে পৃথক শোকপ্রস্তাব এনেছেন। বিমানবাবু জানিয়েছেন, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে দেশজুড়ে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয়েছিল। এখন তাই সিপিএমের উপরে হামলা নিয়ে গোটা দেশে সঠিক প্রচার জরুরি। কারাটের বক্তব্য, “আমরা পার্টির ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত করে তা শোধরানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু কয়েক দশকের আন্দোলনের ফলে পশ্চিমবঙ্গে লক্ষাধিক মানুষের যে জনভিত্তি গড়ে উঠেছে, হিংসা দিয়ে তা দমন করা যাবে না।” আগামী কয়েকদিন মতাদর্শগত দলিল এবং রাজনৈতিক-সাংগঠনিক দলিল নিয়ে আলোচনার সময়েও পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গ আসবে বলেই দলের নেতাদের একাংশ জানাচ্ছেন। দেখার, প্রথমদিন রাজনৈতিক দলিল পেশ করে কারাট যেমন রাজ্য প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’র কথা বলেছেন দলের সভায়, সে ভাবেই ‘সাংগঠনিক ব্যর্থতা’র কথা তিনি উল্লেখ করেন কিনা। যে প্রসঙ্গে আসতে পারে শুদ্ধকরণ অভিযান ও অন্যান্য সাংগঠনিক প্রসঙ্গও। |