কারাটের শক্তি বৃদ্ধির পথে
‘কাঁটা’ রেখে গেলেন বর্ধন
তিথিই কি না ‘অস্বস্তি’ বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন!
অতিথির অবশ্য দাবি, তিনি ঘরেরই লোক। তাই আগে সংসার সামলে তার পর বাইরে তাকানোর পরামর্শ দিয়ে গেলেন।
দলের বিংশতিতম পার্টি কংগ্রেসের উদ্বোধনী ভাষণে আজ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট প্রথমে বলেছিলেন, দেশ জুড়ে ইউপিএ এবং এনডিএ-র ‘বিশ্বাসযোগ্যতা’ কমতে থাকায় ‘প্রকৃত বিকল্প’ গড়ে তোলার দায়িত্ব বামেদেরই নিতে হবে। সেই লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিজেদের চারপাশে একজোট করতে হবে। কারাটের কথায়, “এই কাজ করতে গেলে আগে সিপিএমের শক্তি বাড়াতে হবে। সিপিএমকে গোটা দেশে ভিত্তি এবং প্রভাব বিস্তার করতে হবে। শক্তিশালী সিপিএম-ই পারে শক্তিশালী বাম ঐক্য গড়ে তুলতে এবং তার থেকে অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তির কাছে পৌঁছে যেতে।”
কারাটের আহ্বানের পরেই বলতে উঠে বাম ঐক্য নিয়ে সিপিএম নেতৃত্বকে কিছু ‘অপ্রিয় সত্য’ শোনালেন সিপিআইয়ের প্রবীণ নেতা অর্ধেন্দু ভূষণ বর্ধন! যিনি বললেন, “শক্তিশালী দল হয়ে ওঠার বাসনা যেমন আপনাদের আছে, তেমন আমাদেরও সংগঠন বিস্তারের ইচ্ছাকে নিশ্চয়ই আপনারা মর্যাদা দেবেন! এটা পরস্পর-বিরোধী কোনও ঘটনা নয়, বরং বাম ঐক্যের জন্য আপেক্ষিক ভাবে সত্য। আগে তো প্রকৃত বাম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তার পরে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলিকে একজোট করার প্রশ্ন। বাম ঐক্যকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দেওয়ার জন্য একটা প্রক্রিয়া দরকার। মাঝে মাঝে আমরা যে আলোচনায় বসি, সেটা যাতে নিয়মিত ভাবে বসা যায়, দেখতে হবে। আশা করব, এই পার্টি কংগ্রেস শেষ হলেই সেই প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনায় বসা যাবে।”
অর্থাৎ পরিশীলিত ভাষায় ‘বন্ধু’ কারাটকে বর্ধনের ‘বার্তা’ বাম ঐক্যের ত্রুটি আগে মেরামত হোক। আগে বামফ্রন্ট নামক ঘর গোছানো হোক। তার পরে বাইরের কথা ভাবা যাবে। বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিএমের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একাধিক বার সরব হয়েছেন বর্ধনেরা। এ বার সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের মঞ্চে দাঁড়িয়েই কারাটদের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হল, সিপিএমের বড় হওয়া মানে সিপিআইয়ের মতো ছোট বাম দলকে গিলে ফেলা নয়! সেই সঙ্গেই বর্ধনের আরও বক্তব্য, “শুধু ভোটের সময় তৃতীয় ফ্রন্টের কথা বললে কিচ্ছু হবে না!”
প্রবীণ বর্ধন অবশ্য জানতেন, মিঠে ভাষায় বললেও তাঁর ‘বার্তা’ যথেষ্ট কড়া। নিজেই যোগ করলেন, “প্রকাশ যখন আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, আমি সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এখন আর নেই। প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা হিসাবে যে সম্বোধনে প্রকাশ ডাকল, সেই পরিচয়েই পরিচিত হতে চাই। আমাদের পার্টি কংগ্রেস সবে শেষ হয়েছে। শরীরটাও ভাল যাচ্ছিল না। তাই বক্তৃতা লিখে আনতে পারিনি। পরে এই ভাষণ লিখে পাঠাব। যা বললাম, আপনারা মনে রাখবেন। আলোচনা করবেন।”
অগ্রজ নেতার কথা মনে রেখেছেন কারাট। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ভাষণের শেষে বিরতির পরে প্রতিনিধি অধিবেশনে দলের রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক কারাট বর্ধনের মূল সুরেরই প্রতিধ্বনি করেছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর। প্রত্যাশিত ভাবেই তিনি মেনে নিয়েছেন, গত লোকসভা ভোটের সময় ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক তৃতীয় বিকল্পের কথা বলতে যাওয়া ভুল হয়েছিল। এ-ও স্বীকার করেছেন, চার বছর আগের পার্টি কংগ্রেসের সময় থেকে দলের সাংগঠনিক শক্তি ক্রমশ হ্রাসই পেয়েছে। দক্ষিণ ভারতে কেরল বা অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যে সংগঠন থাকলেও উত্তর ভারতে দল প্রায় পাকাপাকি ভাবে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়ছে। বুঝিয়ে দিয়েছেন বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক জোট গড়ে এগোনোই ভবিষ্যতের রণকৌশল হতে চলেছে।
প্রশ্ন থাকছে, গোটা দেশে ‘কোণঠাসা’ হওয়ার কথা নিজেই যেখানে কবুল করে নিচ্ছেন কারাট, সেখানে ‘এগোনো’র কথা আসছে কী ভাবে? সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যায়, সাম্প্রতিক কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফল যেমন বামেদের পক্ষে একেবারেই আশাপ্রদ হয়নি, তেমনই আরও একটি ‘সত্য’ প্রকট হয়েছে। ইউপিএ-র সরকার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে কিন্তু একই সঙ্গে নিম্নগামী হচ্ছে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র প্রতি মানুষের ভরসার চিত্রও। এই অবস্থায় তৈরি-হওয়া শূন্যস্থানের দখল নেওয়ার কথা বলছেন কারাট। অর্থাৎ সংগঠনে ধস থাকলেও জাতীয় পরিস্থিতির নিরিখে একটা ‘সুযোগ’ বামেদের সামনে আছে। কিন্তু সিপিএমেরই একাংশের মতে, ওই শূন্যস্থানে পা রাখার কাজও সিপিএমের জন্য ‘কঠিন’ করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতা কিছু মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্রায় এক ধরনের জোট গড়ে ফেলছেন মমতা। তাঁর প্রাথমিক উদ্দেশ্য অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়। কিন্তু চরিত্রগত ভাবে তাঁর রাজনীতি ইউপিএ-এনডিএ’র বাইরে বিকল্প জোটের চেহারাই নিচ্ছে এবং তাতে সিপিএমের কাজ কঠিন হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে সিপিএম অবশ্যই মমতার কাছে গণতান্ত্রিক জোটের জমি হারানোর কথা মানতে রাজি নয়। বরং, প্রতিনিধি-পর্বে কারাট আজ বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার যত ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ হয়ে পড়ছে, ইউপিএ-র মধ্যে ‘দরকষাকষি’ তত বাড়ছে। যাতে সামিল তৃণমূলও। যারা কি না কারাটের ভাষায় ‘দ্বিচারিতা সম্পন্ন’ একটি দল। যাদের কোনও নীতিরই ধারাবাহিকতা নেই। তারা যা করছে, সবই আরও ‘বেশি কিছু আদায়’ করার জন্য! তবুও কারাট মনে করছেন, লোকসভার অন্তর্বর্তী নির্বাচন হবে না। কারণ, কোনও দলই সেটা চায় না।
আগামী লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে ‘বিকল্প’ গণতান্ত্রিক জোটের আন্দোলনভিত্তিক ঐক্যের এ দিনের আহ্বান পার্টি কংগ্রেসের বাকি দিনগুলিতে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পাবে। কিন্তু একই সঙ্গে দলের জন্য জারি থাকবে কারাটের সতর্ক-বার্তাও। যে বার্তায় ইউপিএ-র দুর্দশার কথা ব্যাখ্যা করেও কারাট পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের বলেছেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একটা বড় অংশ এখনও কংগ্রেসকে ‘ভরসা’ করেন। আবার আপাতত তারা পিছু হটলেও বিজেপি-কেও ছোট করে দেখা চলবে না।
অর্থাৎ মনে ‘ভয়’ থাকবে! কিন্তু ভাবতে হবে ‘জয়ে’র কথা!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.