লঙ্কার ফুলে পোকার আক্রমণের জেরে মাথায় হাত পড়েছে কোচবিহারের হলদিবাড়ির কৃষকদের। দিন দশেক ধরে ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের লঙ্কা খেতে ওই পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। ফলে ফুল মরে যাচ্ছে। ওই ঘটনায় লঙ্কার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে নিম তেল বিতরণ শুরু হয়েছে। ওই তেল লঙ্কা গাছে ছড়ানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কৃষকদের অভিযোগ, নিম তেল ছড়িয়েও পোকার মারা যাচ্ছে না। এদিকে, বাজারে লঙ্কার আমদানি কম হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে লঙ্কার দাম। |
পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ বৈকুন্ঠনাথ রায় বলেন, “পোকার আক্রমণ ভীষণ ভাবে হয়েছে। আমাদের পরামর্শ এবং সহায়তায় কাজ হচ্ছে না। কৃষি দফতরের কাছে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।” কৃষি আধিকারিকদের মতে, এ বার শীত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল। তার পরে মার্চে গরম এতটাই বেড়ে যায় যে খরা পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারই জেরে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। হলদিবাড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্র বলেন, “লঙ্কা খেতে পোকার আক্রমণ মোকাবিলায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।” কৃষি দফতর সুত্রে জানা গিয়েছে, হলদিবাড়িতে এ বছর ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে লঙ্কার চাষ হয়েছে। গত বছর চাষের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর। ৩০০ হেক্টর জমিতে লঙ্কার চাষ কম হওয়ায় মোট উৎপাদন যে কম হবে সেটা আগাম অনুমান করেছিলেন কৃষি আধিকারিকেরা। তার মধ্যে পোকার আক্রমণে উৎপাদন আরও মার খাবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। পয়ামারি গ্রামের কৃষক বলেন রায় এবং হুদুমডাঙার কৃষক আলতাফ মহম্মদ প্রান্তিক চাষি। দুজনেই এক বিঘা করে জমিতে লঙ্কা চাষ করেছেন। তাঁরা বলেন, “বিঘায় কমপক্ষে ২৪ কুইন্টাল লঙ্কা উৎপাদন হবে আশা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ১৪ কুইন্টালের বেশি লঙ্কা হবে না।” হলদিবাড়ির পাইকারি সবজির বাজারে বাজারে ফেব্রুয়ারির শেষ থেকে লঙ্কার আমদানি শুরু হয়। বর্ষার নামার আগে মে মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত লঙ্কা আসে। হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজারে এখন ৮৪ কুইন্টাল লঙ্কা আমদানি হচ্ছে। অন্যান্য বছর এই সময় ২৪০ কুইন্টাল লঙ্কা আমদানি হয়ে থাকে। বুধবার হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি বাজারে প্রতি কিলোগ্রাম লঙ্কা ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গত বছর এই সময় প্রতি কিলোগ্রাম লঙ্কা ১০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছিল। দাম বাড়লেও বাজারে লঙ্কার আমদানি নেই। হলদিবাড়ি ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, “সমগ্র উত্তর ভারতে হলদিবাড়ির লঙ্কার প্রচুর চাহিদা থাকলেও আমদানি কম থাকার জন্য সব জায়গায় পাঠানো যাচ্ছে না। এখন কেবল দিল্লিতে লঙ্কা পাঠানো হচ্ছে।” |