নয়া নির্দেশে বঞ্চিত হতে পারে অন্য শিল্পও
বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে কয়লা জোগানো নিয়ে সংশয়ে কোল ইন্ডিয়া
রাষ্ট্রপতির নয়া নির্দেশ মেনে তাপবিদ্যুৎ সংস্থাকে চুক্তি মাফিক কয়লা সরবরাহ করা কোল ইন্ডিয়ার পক্ষে কার্যত সম্ভব হবে না।
সংস্থার কর্তাদের একাংশ এই উদ্বেগ জানানোর পাশাপাশি এটাও মনে করছেন, কয়লার চাহিদা-জোগানের ফারাক সামলাতে নাজেহাল কোল ইন্ডিয়া যেনতেনপ্রকারে নির্দেশ পালন করতে গিয়ে সিমেন্ট, কাচ ইত্যাদি শিল্পে সরবরাহ কাটছাঁট করতে বাধ্য হবে। বিকল্প হিসাবে কয়লা আমদানির পথেও হাঁটতে পারে সংস্থা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে দাম নিয়ে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।
বিদ্যুৎ শিল্পে কয়লার নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করতে গত মঙ্গলবারই জারি হয়েছে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ। ওই নির্দেশে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সঙ্গে কয়লা সরবরাহ চুক্তি সই করতে হবে কোল ইন্ডিয়াকে। সম্পাদিত চুক্তিতে যে-পরিমাণ কয়লা সরবরাহ করার কথা লেখা থাকবে, তার কমপক্ষে ৮০% জোগানের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে কোল ইন্ডিয়াকে। তার কম দিলে কোল ইন্ডিয়াকে জরিমানা মেটাতে হবে।
কিন্তু কয়লার চাহিদা এবং উৎপাদনের মধ্যে যে ঘাটতি রয়েছে, তা কী ভাবে পূরণ করা হবে, চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে সেটা নিয়েই তৈরি হয়েছে প্রশ্নচিহ্ন। কারণ, একটি হিসাব থেকে দেখা গিয়েছে, ওই সরকারি নির্দেশ মানতে হলে কোল ইন্ডিয়াকে অতিরিক্ত কয়লা জোগাতে হবে কমপক্ষে ১০ কোটি টনেরও বেশি। কিন্তু চলতি আর্থিক বছরে কোল ইন্ডিয়া উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে, তাতে আগের বছরের থেকে এ বার মাত্র ৩ কোটি টনের মতো অতিরিক্ত উৎপাদন হওয়ার কথা।
২০১১-’১২ সালে কোল ইন্ডিয়ার মোট কয়লা উৎপাদনের পরিমাণ ৪৩ কোটি ৫৮ লক্ষ ৪০ হাজার টন। গত বারের থেকে ৪৫ লক্ষ ২০ হাজার টন বেশি। চলতি ২০১২-’১৩ সালের লক্ষ্য ৪৬ কোটি ৪১ লক্ষ টন। অন্য দিকে, সংস্থা ২০০৯-এ বিভিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার সঙ্গে কয়লা সরবরাহ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০০৯ থেকে ২০১১-র ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্পে অতিরিক্ত উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট।
উৎপাদনে টান এবং চড়া দামে আমদানির বিকল্প হিসাবে ‘ই-অকশন’ বা বৈদ্যুতিন নিলামের মাধ্যমে কয়লা বিক্রি কমিয়ে চুক্তিরক্ষার দায় মেটাতে পারে কোল ইন্ডিয়া। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও যে-সব ছোট ক্রেতা, ই-অকশনের মাধ্যমে কয়লা পেত, তারা সমস্যায় পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন এবং চাহিদার ফারাক কী ভাবে পূরণ করা হবে, সেটাই কোল ইন্ডিয়ার কাছে এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
রাজ্যের এক বিদ্যুৎ-কর্তার মতে, কোল ইন্ডিয়া বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির সঙ্গে চুক্তি করার বিষয়টি নানা অছিলায় দেরি করছিল। কারণ বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও, কয়লা উৎপাদন সে ভাবে বাড়েনি। ফলে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি বাড়তি কয়লা চাইলেও কতখানি সেই চাহিদা পূরণ করা যাবে, তা নিয়ে সংশয়েই ছিল কোল ইন্ডিয়া। যে কারণে কেন্দ্র একেবারে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জারি করে এই চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে বলে তিনি মনে করেন। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী ২০১২-’১৭ সালে, অর্থাৎ দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনার শেষে সম্মিলিত ভাবে দেশের তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলির কয়লার চাহিদা দাঁড়াবে ৮৫ কোটি টনের কাছাকাছি। সম্প্রতি পর্ষদের এক কর্তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমকে জানান, আগামী পাঁচ বছরে দেশে বাড়তি ৭৫ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। যার মধ্যে ৬২ হাজার মেগাওয়াটই আসবে কয়লা থেকে। হিসেব মতো কয়লার চাহিদা এখনকার ৪৮ কোটি টনের থেকে আগামী পাঁচ বছরে দ্বিগুণ হবে।
বিদ্যুৎ শিল্পমহল মনে করছে, দ্বাদশ যোজনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে তাতে কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে খুব বেশি হলে ৫২ কোটি টনের কিছু বেশি কয়লা মিলতে পারে। পর্ষদের হিসেবে, চাহিদা দাঁড়াবে ৮৫ কোটি টন। অর্থাৎ ঘাটতি থেকে যাবে ৩৩ কোটি টনের মতো। ফলে বিপদে পড়তে পারে বিদ্যুৎ সংস্থাগুলি। তবে কয়লা মন্ত্রকের সচিব অলোক পার্তি সম্প্রতি দিল্লিতে জানান, দ্বাদশ যোজনায় বিদ্যুৎ শিল্পে কয়লার যতটা চাহিদা বাড়বে বলে ধারণা, তা না-ও হতে পারে। কারণ বহু নয়া প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.