দয়াল সেনগুপ্ত • দুবরাজপুর |
গ্রামের একটি পুকুর সংস্কারের কাজে দুর্নীতি করা হয়েছে বলে স্থানীয় বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন দুবরাজপুরের হালসোত গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। ইতিমধ্যেই উপযুক্ত তদন্ত চেয়ে দুবরাজপুরের বিডিও এবং ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে ওই বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, ৬-১০ থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১০০ দিনের প্রকল্পে ওই গ্রামের ‘সায়েরদিঘি’ নামে একটি পুকুর সংস্কারের কাজ করায় বালিজুড়ি পঞ্চায়েত। কাজ করেন কয়েকশো জবকার্ডধারী। তৈরি হয় মাস্টাররোল। এ পর্যন্ত কিছু বোঝা যায়নি। কিন্তু যে মুহূর্ত থেকে টাকা দেওয়া শুরু হয়, দেখা যায় এমন অনেক লোক টাকা পাচ্ছেন যাঁদের জবকার্ড থাকলেও ওই পুকুর সংস্কারের কাজ আদৌ করেননি। বিষয়টি জানাজানি হতেই পঞ্চায়েতে প্রতিবাদ করা হয়। কিন্ত সেই প্রতিবাদে কর্ণপাত করেনি পঞ্চায়েত। বাধ্য হয়েই আর টি আই করে বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের কাছে ওই কাজ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি তথ্য জানতে চান হালসোত গ্রামের এক বাসিন্দা। ভবসিন্ধু পাল বলেন, “তথ্য পাওয়ার পরে দেখি, আমাদের সন্দেহ অমূলক নয়। স্পষ্টত দু-তিনটি জায়গায় অসঙ্গতি রয়েছে। মাস্টাররোলে এমন অনেক জবকার্ডধারীর নাম রয়েছে যাঁরা কাজ করেননি। আবার এমন অনেকের নাম রয়েছে যাঁরা সেই সময় এলাকার বাইরে ছিলেন। শুধু তাই নয় অন্যায় ভাবে যাঁদের নাম গোঁজা হয়েছে তাঁরাই ওই কাজে নিযুক্ত অন্যদের তুলনায় বেশি অঙ্কের টাকা পেয়েছেন। ৬-১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কাজ হলেও মাস্টাররোলে তা ৭-১২ জানুয়ারি দেখানো হয়েছে।”
দিলীপ রায়, মণিলাল বাগদি, শ্যামল চট্টোপাধ্যোয়রাও ভবসিন্ধুবাবুর সঙ্গে একমত। তাঁরা বলেন, “যাঁরা কাজ করেননি তাঁদের সঙ্গে নিশ্চই গোপন বোঝাপড়া ছিল পঞ্চায়েতের। তা ছাড়া, যে পরিমাণ মাটি কাটা হয়েছে আর যে পরিমাণ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, এই দুইয়ের হিসেব মেলালেই আমাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমানিত হবে।” ওই বাসিন্দাদের আভিযোগ, “শুধু পুকুর সংস্কারের কাজেই নয় ইন্দিরা আবাস নিয়েও দু-একটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। এই গ্রামে যেখানে উপভোক্তা এক বা দু’কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন, অথচ বাড়িই করাননি।”
যদিও কোনও অভিযোগই মানেননি বালিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের মালতি ঘোষ। তিনি বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা যেহেতু ব্যাঙ্ক অথবা পোষ্টঅফিসের মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাই এ ধরনের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। কারণ যিনি কাজ করেছেন তিনিই টাকা তোলেন। এখানে পঞ্চায়েতের ভূমিকা কোথায়?” আর ইন্দিরা আবাস প্রসঙ্গে প্রধান বলেন, “আমি যতদূর জানি, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই উপভোক্তা হয় বাড়ি করেছেন অথবা করছেন।” দুবরাজপুরের যুগ্ম বিডিও মানিক সিংহ মহাপাত্র বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর প্রতিনিধি পাঠিয়ে তদন্ত করানো হয়েছে। তবে রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি। রিপোর্টে অভিযোগের সত্যতা প্রমানিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিডিও-র আশ্বাসে তালা খুলে দেন ঠিকাদাররা। ঠিকাদার দেবাদিত্য দেবাংশী, আসাদুল শেখ, শ্যামল সাহা’রা বলেন, “বকেয়া টাকা না পাওয়ায় আমরা হাত গুটিয়ে বসে আছি। অনেকে চড়া সুদে ধার করে জিনিসপত্র সরবরাহ করেছিলেন। এ দিকে, সুদের বোঝা বাড়ছে অথচ বার বার পঞ্চায়েতে বলে টাকা পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।” পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের বিশ্বনাথ হেমব্রম বলেন, “মজুরি বাবদ বকেয়া রয়েছে ৫২ লক্ষ টাকা। ২৫ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে উপকরণ বাবদ। বিডিও-র কাছে টাকা চেয়ে মিলেছে মাত্র ১৫ লক্ষ টাকা। মজুরি দিতেই ওই টাকা চলে গিয়েছে। টাকা পেলেই ঠিকাদারদের দেওয়া হবে।”
ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের বিডিও মনমোহন ভট্টাচার্য বলেন, “বকেয়ার জন্য পঞ্চায়েতে তালা দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। যাঁরা এই কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিয়মে রয়েছে, আগে মজুরদের বেতন দেওয়ার পরে উপকরণ বাবদ টাকা দেওয়ার কথা। সেই মতো মজুরদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। যত শীঘ্র ঠিকাদারদের টাকাও দিয়ে দেওয়া হবে।” |