এক দিকে মাছি গলতে না পারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অন্য দিকে রাজনৈতিক প্রস্তুতি। পাক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির আসন্ন সফর ঘিরে এই দু’তরফেই সাজছে নয়াদিল্লি।
বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, ৪০ জনের প্রতিনিধি দল নিয়ে আগামী রবিবার সকালে নয়াদিল্লি পৌঁছবেন জারদারি। পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকেরও সেই দলে থাকার কথা। মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসবেন জারদারি। তার পর সদলবল জয়পুর হয়ে অজমের যাবেন তিনি। অজমের দরগায় আধঘণ্টাখানেক কাটিয়ে জারদারি ফিরবেন জয়পুরে। এখনও স্থির রয়েছে, সে দিনই জয়পুর থেকে সরাসরি দেশে ফিরবেন তিনি।
সাউথ ব্লক জানাচ্ছে, এটি নিছকই ‘ব্যক্তিগত সফর’। অজমের দেখতে চেয়েছিলেন জারদারি। মনমোহন রাজি হয়েছেন, সৌজন্য-মধ্যাহ্নভোজেরও আয়োজন করেছেন। মনমোহন নিজে যদিও এখনও ইসলামাবাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। বিদেশ মন্ত্রকের এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্তার কথায়, “মুম্বই সন্ত্রাস নিয়ে ইসলামাবাদ চোখে পড়ার মত কোনও পদক্ষেপ না করলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পাকিস্তানে যাওয়া সম্ভব নয়। কেন না সে ক্ষেত্রে তিনি দেশে ফিরলে অনিবার্য প্রশ্ন উঠবে, সফরের নিট ফল কী হল? সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো পরিস্থিতি যত দিন না তৈরি হচ্ছে, তত দিন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাক সফর অর্থহীন।”
স্বাভাবিক ভাবেই, জারদারির সফর থেকেও বিরাট কোনও প্রত্যাশা নেই। কিন্তু দীর্ঘদিন বাদে কোনও পাক রাষ্ট্রনায়কের আসার সুযোগে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বিষয় ঝালিয়ে নিতেও ছাড়বেন না ভারতীয় নেতৃত্ব। যার মধ্যে থাকবে ভিসার কড়াকড়ি শিথিল করা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃৃদ্ধির মতো বিষয়গুলিও। সম্প্রতি ভারতকে বাণিজ্যে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের (এমএফএন) মর্যাদা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাক মন্ত্রিসভা। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো নিয়ে আসন্ন বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। পাক মাটিতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগেও আগ্রহ দেখিয়েছে দিল্লি। আবার, পাকিস্তানের জমি ব্যবহার করে আফগানিস্তানে গম পাঠানোর মতো সিদ্ধান্তে ভারতকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে ইসলামাবাদ। জারদারি নিজেও বিভিন্ন শিল্প-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এ ব্যাপারে ভারতকে পাশে পেতে তাঁরও উৎসাহ থাকবে যথেষ্ট। এ সবের পাশাপাশি রেহমান মালিকের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে বলে খবর।
তবে একটি ব্যাপারে মনমোহন সরকারকে ঈষৎ বিড়ম্বনায় পড়তে হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। একটি হত্যা মামলায় অজমেরেরই জেলে গত কুড়ি বছর ধরে বন্দি খলিল চিস্তি নামে এক পাক নাগরিক। রাজস্থান হাইকোর্টে তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের মামলাটি দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে। পাক প্রেসিডেন্টের অজমের সফরে স্বভাবতই বিষয়টি উঠবে। সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে মুক্তি দিয়ে সৌজন্যের বার্তা দেওয়া হবে কি না, তা-ও ভাবনার মধ্যে রয়েছে নয়াদিল্লির। |