মালিকপক্ষ প্রোমোটারের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কালনার সমাজবাড়ি। প্রশাসনের নানা স্তরে এমনই অভিযোগ জানিয়ে কালনার ঐতিহাসিক এই বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের দাবি জানিয়েছিল নানা সংগঠন। বুধবার এ নিয়ে বৈঠক হল কালনা মহকুমাশাসকের দফতরে। বৈঠকে হাজির ছিলেন মহকুমাশাসক, ওই বাড়ির মালিকপক্ষ, মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক, মহকুমার পুলিশকর্তারা, কালনা পুর কর্তৃপক্ষ। বৈঠক শেষে মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি জানান, মালিকপক্ষ জানিয়েছেন, সরকারি ভাবে সম্পত্তি অধিগ্রহণ হলে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই।
কালনার ২ নম্বর ওয়ার্ডে এই সমাজবাড়ির মধ্যে রয়েছে একটি স্মৃতি সৌধ। প্রায় ৫০ ফুট লম্বা এই সৌধ টেরাকোটার কাজে তৈরি। তবে সংস্কারের অভাবে সেই সৌধের গায়ে এখন আগাছা জন্মেছে। দেওয়াল থেকে খসে পড়ছে চুন-সুরকি। জনশ্রুতি, প্রায় দু’শো বছর পুরনো এই সৌধ বর্ধমান রাজ পরিবারের সমাধিক্ষেত্র। সেখানে বর্ধমানের মহারাজা তেজচন্দ্র বাহাদুর-সহ রাজ পরিবারের সদস্যদের চিতাভস্ম সমাধিস্থ হয়েছে। এই সৌধ ছাড়াও সমাজবাড়িতে রয়েছে প্রাচীন ফলক-সহ বেশ কিছু নিদর্শন। |
ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য। |
সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ জানান, প্রাচীন নিদর্শন সমৃদ্ধ এই বাড়িটি বিক্রির চেষ্টা করছেন মালিকপক্ষ। বিভিন্ন সংগঠনের তরফে সমাজবাড়ি রক্ষার জন্য মহকুমাশাসক, পুরসভা ও বিধায়কের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের আবেদন করা হয়। মহকুমা প্রশাসনের তরফে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো হয়। মাস তিনেক আগে রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ কালনা শহরে এলে তাঁর কাছে সমাজবাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন জানান স্থানীয় বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ মার্চ পর্যটন দফতর থেকে জেলাশাসককে একটি চিঠি পাঠিয়ে সমাজবাড়ি নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করার কথা জানানো হয়। জেলাশাসক এ ব্যাপারে মহকুমাশাসককে ব্যবস্থা নিতে বলেন। সেই প্রেক্ষিতেই এ দিন সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়। সমাজবাড়ির মালিকপক্ষের তরফে শঙ্কর বিশ্বাস বলেন, “আমরা কয়েক বছর আগে পুরসভাকে রক্ষণাবেক্ষণের আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুরসভার তরফে তখন জানানো হয়েছিল, তাদের তেমন আর্থিক অবস্থা নেই। অর্থের প্রয়োজন থাকায় আমরা সম্পত্তি বিক্রির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলাম। তবে সরকার এই সম্পত্তি অধিগ্রহণ করলে আমাদের আপত্তি নেই। আমরাও চাই, এই নিদর্শন সংরক্ষিত হোক।” বৈঠকেও তিনি এ কথা জানিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে বিধায়কের কাছে একটি সংস্থা ওই সম্পত্তি কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বেসরকারি হাতে সম্পত্তি গেলে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন যাতে সংরক্ষণ হয় তা প্রশাসন দেখবে। মহকুমাশাসক জানান, সমাজবাড়িতে আবগারি দফতরের একটি অফিস রয়েছে। সেটি যাতে অন্যত্র সরানো হয় তার জন্য জমির খোঁজ চলছে। |