বিস্তর তল্লাশি চালিয়েও যাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ বারেবারেই দাবি করছিল, সেই সিপিএম নেতাকে সভায় ঘেরাও করে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। সোমবার রাতে কোচবিহারের ঘোসকাডাঙা থানার খনিকাবাড়ি গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম নারায়ণ সরকার। মাথাভাঙার বাসিন্দা নারায়ণবাবু সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কৃষক নেতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নাম করে ১ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগে মামলা চলছে।
প্রাক্তন বনমন্ত্রী তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায়ের দাবি, “তৃণমূলের বিক্ষোভ থেকে উদ্ধারের কথা বলে থানায় নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় নারায়ণবাবুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পঞ্চায়েত ভোটের কথা মাথায় রেখে আমাদের কর্মীদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করতেই এমন ছক কষা হয়েছে।”
কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “চাকরি দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগে নারায়ণবাবুকে বেশ কিছু দিন ধরে খোঁজা হচ্ছিল। সোমবার এলাকায় তাঁকে দেখে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে আসে। পরে প্রতারণা সংক্রান্ত পুরনো অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” মঙ্গলবার ধৃত সিপিএম নেতাকে মাথাভাঙা আদালতে তোলা হলে তাঁকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। এ দিন আদালত চত্বরে নারায়ণবাবুর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০১১ সালে স্থানীয় বাসিন্দা নন্দন সরকারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই মামলা হয়। অভিযোগ, নন্দনবাবুর স্ত্রীকে আইসিডিএসে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে দু-দফায় ১ লক্ষ টাকা নিয়েছেন নারায়ণবাবু। কিন্তু, চাকরি দিতে পারেননি। এই নিয়ে থানায় মামলা দায়ের হয়। নারায়ণবাবু তখন হুমকিও দেন বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করে। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পরে নন্দনবাবুরা চাপ বাড়ালেও কাজের কাজ হয়নি। স্থানীয় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের একাংশ জানান, ওই সিপিএম নেতা বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরছেন বলে
পুলিশকে জানিয়েও লাভ হয়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় নারায়ণবাবু দ্বারিকামারি গ্রামে কৃষক সভার একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। সেখানেই উত্তেজিত জনতা তাকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
নারায়ণবাবুর স্ত্রী শ্যামলী সরকারের অভিযোগ, “এসবই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার উদাহরণ। উনি ষড়যন্ত্রের শিকার।” তৃণমূল নেতারা অবশ্য ঘটনাটি নিয়ে ‘পুলিশ যা করার করবে’ বলে মন্তব্য করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহারের জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “অপরাধীর আবার রং কি? নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যে কেউ গ্রেফতার হতে পারেন।” |