বর্তমান ছাত্র সংসদের কমিটির মেয়াদ ফুরোয়নি। তার উপরে সামনেই পরীক্ষা। এই অবস্থায় ছাত্র সংসদের ভোট এগিয়ে এনে বিতর্কের মুখে পড়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সোমবার ছিল মনোনয়ন পত্র তোলার দিন। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কোনও মনোনয়ন পত্র তোলেনি এসএফআই। রাজ্যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সম্প্রতি কলেজে শাখা গড়ে ওঠে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের। কলেজের এসএফআই ছাত্র সংগঠনের একাংশ যোগ দেয় তৃণমূল ছাত্র সংগঠনের ছাতার তলায়। ছাত্র সংসদে থাকা এসএফআইয়ের ছাত্র প্রতিনিধিদেরও একাংশ ইস্তফা দেন। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ছাত্র সংগঠন ফের ছাত্র সংসদের নির্বাচন দাবি করে। এসএফআইয়ের অভিযোগ, তাদের সংগঠনের নেতা তথা ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি, সহ সভাপতিরা এখনও রয়েছেন। ছাত্র সংসদের পুরনো কমিটি এখনও বর্তমান। তাদের মেয়াদ ফুরোয়নি। ১২ এপ্রিল থেকে ছাত্রছাত্রীদের চলতি শিক্ষাবর্ষের একটি পরীক্ষা। তার উপর অনেক ছাত্রছাত্রীর পরের শিক্ষাবর্ষে উত্তীর্ণ হওয়া নির্ভর করছে। তার ঠিক আগে ৭ এপ্রিল ছাত্র সংসদের নির্বাচনের দিন ঠিক করায় প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। অপর ছাত্র সংগঠন ডিএসও’র তরফেও মেয়াদ ফুরনোর আগে, পরীক্ষার মুখে ভোট করানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ অনুপ কুমার রায় বলেন, “কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েই ছাত্র সংসদের নির্বাচন করানো হচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।” মেডিক্যাল কলেজ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত ১৬ জুন কলেজে ছাত্র সংসদের ভোট হয়েছিল। ১ বছর মেয়াদ থাকে ছাত্র সংসদের। তবে গুরুতর কোনও প্রয়োজন মনে করলে কলেজের অধ্যক্ষ নতুন করে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করাতে পারেন। কলেজের এসএফআই, ডিএসও ছাত্র সংগঠন মনে করছে এখনই ভোট করানোর কোনও প্রয়োজন ছিল না। তা ছাড়া সামনে পরীক্ষা। সমস্ত বিভাগের এই পরীক্ষা জুন মাস নাগাদ শেষ হয়ে যাবে। সে সময় নির্বাচন করানোই যেত। পুরনো কমিটির মেয়াদও তখন ফুরিয়ে যেত। তা না করে তৃণমূলের চাপেই তড়িঘড়ি ভোট করানো হচ্ছে। কলেজের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সৌত্রিক রায়ের দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ ভোট এগিয়ে আনেননি। বরং পিছিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “গত সেপ্টেম্বর মাসে কলেজের ছাত্র সংসদের কয়েকজন পদাধিকার-সহ মোট ১১ জন ছাত্র প্রতিনিধি ইস্তফা দেন। তখনই ওই সমস্ত আসনে নির্বাচন করানো যেত। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে এর পর নভেম্বর মাসেই পুরনো ছাত্র সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। তার পরেই আমরা নির্বাচন দাবি করি। মার্চের প্রথম সপ্তাহেই নির্বিঘ্নে নির্বাচন করানো যেত। অথচ কলেজ কর্তৃপক্ষ চেয়েছেন যে কোনও প্রকারে তা পিছিয়ে দিতে। পরীক্ষার মুখে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা হোক আমরাও চাই না। এর জন্য দায়ী কর্তৃপক্ষই।” কলেজের ডিন সব্যসাচী দাস (ছাত্র বিষয়ক)-এর কথায়, ছাত্র সংসদ থেকে ছাত্র প্রতিনিধিদের একাংশ পদত্যাগ করা,ফের তা প্রত্যাহার করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। সে কারণে তখন নির্বাচন করানো সম্ভব হয়নি। কলেজের এসএফআই ইউনিটের দায়িত্বে থাকা অনুরূপ সাহা, সামিম ইয়ূসুফ হায়দারদের দাবি, ১৬ টি আসনের মধ্যে তাঁদের কয়েক জন ছাত্র প্রতিনিধি ইস্তফা দিলেও বাকিরা রয়েছেন। নির্বাচন এগিয়ে এনে ছাত্র স্বার্থ নষ্ট করা হচ্ছে। পরীক্ষার মুখে কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। অনূরূপ বলেন, “পুরনো কমিটির মেয়াদ পর্যন্ত আমাদের প্রতিনিধিরা পদে থেকে কাজ চালাতে চান জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কলেজের নিয়ম মতো একজন ছাত্র প্রতিনিধি থাকলেও ছাত্র সংসদ চলতে পারে। অথচ তৃণমূলের কাছে নতিস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ এ ভাবে নির্বাচন করছেন। এই নির্বাচন বৈধ বলে আমরা মনে করি না।” কলেজের ডিএসও’র ছাত্র নেতা তুষার কান্তি সরকারের অভিযোগ, তৃণমূলের চাপে নির্বাচন এগিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। |