গত ২০ দিনে ৫ জন প্রসূতির মৃত্যু হল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। মঙ্গলবার সকালেও এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। মৃতার পরিবারের অভিযোগ, চিকিৎসায় ত্রুটির জেরেই এই মৃত্যু। বারবার চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে উদ্বিগ্ন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ দিনই জরুরি বৈঠকে বসেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যাল। বৈঠকে হাসপাতাল সুপার রামনারায়ণ মাইতি, সহকারি সুপার, নার্সিং সুপার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকেরা। জানা গিয়েছে, বৈঠকে চিকিৎসকেরা বেশ কিছু পরিকাঠামোগত সমস্যার জানান। তাঁদের বক্তব্য, পরিকাঠামো না থাকাতেই সমস্যা হচ্ছে। অধ্যক্ষ তখন বলেন,“ কী কী প্রয়োজন, দ্রুত তার তালিকা পাঠান।” মেডিক্যাল কলেজ সূত্রের খবর, অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতিদের একটি আলাদা ওয়ার্ডে রেখে দেখভাল করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বৈঠক শেষে অধ্যক্ষ বলেন,“ পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।” এ দিনের প্রসূতি মৃত্যু ঘিরে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দেন তিনি। |
বিক্ষোভের পর মেদিনীপুর মেডিক্যালে পুলিশি প্রহরা। নিজস্ব চিত্র। |
গত রবিবার হাসপাতালে ভর্তি হন মৌমিতা পাত্র (২৩)। বাড়ি খড়্গপুর লোকাল থানার চকতুড়্যা গ্রামে। ওই দিন রাতে তাঁর একটি পুত্রসন্তান হয়। পরে ওই প্রসূতির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। সোমবার সকাল থেকে ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। ওই দিন দুপুরে ফের অস্ত্রোপচার করা হয়। আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় মৌমিতাদেবীকে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর পেয়েই উত্তেজিত হয়ে পড়েন প্রসূতির পরিবারের লোকজন। মৃতার পরিবারের লোকজন আইসিইউয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। মৌমিতাদেবীর স্বামী মেঘনাদ পাত্রের অভিযোগ, “চিকিৎসার গাফিলতির জন্য এই ঘটনা।” তাঁর আত্মীয় অরুণ মঙ্গল বলেন, “অধিকাংশ সময় জুনিয়র ডাক্তার চিকিৎসা করছেন।” এ দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগও জানানো হয়। মৃতার পরিবারের লোকজন মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করতে চেয়ে আবেদন জানান।
এ দিন দুপুরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন অধ্যক্ষ। হাসপাতাল সুপার, সহকারী সুপার, নার্সিং সুপারও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জানা গিয়েছে, এ দিন সকালে প্রসূতি মৃত্যুর খবর পেয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন অধ্যক্ষ। দুপুর ১২টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে মেডিক্যাল কলেজে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে শুরু হয়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে বৈঠক চলে। কেন বারবার চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠছে, এই পরিস্থিতি এড়ানোর পথ কী, আলোচনায় তা উঠে আসে। কর্তৃপক্ষের একাংশের বক্তব্য, রোগীর পরিজনদের সঙ্গে একাংশ চিকিৎসক ভাল ব্যবহার করেন না। তাই পরিস্থিতি অনেক সময় জটিল হয়ে ওঠে। উত্তেজনা ছড়ায়। বৈঠকেও বিষয়টি ওঠে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এমন কোনও প্রসঙ্গ আলোচনায় উঠে এসেছে বলে মানতে নারাজ। বরং তাঁদের বক্তব্য, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়। উপস্থিত সকলে তাঁদের মতামত জানান। সিজারের পর প্রসূতিদের একটি আলাদা ওয়ার্ডে রেখে দেখভাল করার বিষয়টি ওঠে। অনেকের মত, এমনটা হলে আর গাফিলতির অভিযোগ উঠবে না। অধ্যক্ষ আশ্বাস দেন, পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। |