বামফ্রন্ট আমলে জলপাইগুড়িতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ কাণ্ড নয়া মোড় নিয়েছে। নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নতুন ভাবে খতিয়ে দেখতে আজ, বুধবার ফের জলপাইগুড়িতে আসছে একটি তদন্ত দল। রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে গঠিত তদন্ত দলটি তিন দিন জলপাইগুড়িতে থাকবে বলে জানা গিয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের এক উপসচিব ওই তদন্ত দলের নেতৃত্বে আছেন। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালে জেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল। সেই পরীক্ষার দ্বিতীয় বাছাই দুই হাজার আবেদনকারীর (যাদের নাম প্রথম প্যানেলে স্থান পায়নি) লিখিত পরীক্ষার খাতা তদন্ত দলটি জেলা থেকে সংগ্রহ করে কলকাতায় নিয়ে যাবেন। সেই সঙ্গে যে সমস্ত স্কুলে নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছিল, সেই স্কুলগুলিতেও যাবে দলটি। নিয়োগের পরীক্ষার খাতা যে সব স্কুল শিক্ষক দেখেছিলেন তাঁদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই দুই সিদ্ধান্ত ঘিরে দুটি জল্পনা দেখা দিয়েছে। এক, নিয়োগের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে তৈরি মেধা তালিকার দ্বিতীয় বাছাইদের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্তে প্রথম প্যানেলে থাকা অনেক নাম বাতিল হয়ে যেতে পারে। দুই, নিয়োগের পরীক্ষার খাতা যে শিক্ষকরা দেখেছেন, তদন্ত কমিটি তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক উৎপল বিশ্বাস বলেন, “আমি কোনও মন্তব্য করব না।” ২০১০ সালের ৬ জুন জলপাইগুড়িতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় ১২ হাজার আবেদনকারী পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার পরীক্ষার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ওই বছরের জুলাই মাসে ১৪১১ জনের প্যানেল প্রকাশ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। প্যানেলে সিপিএমের তৎকালীন জেলা সম্পাদকের পুত্রবধূ, সংসদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী-সহ সিপিএমের বড়মাপের নেতাদের আত্মীয়দের নাম থাকায় দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অনিয়মের অভিযোগে জেলা জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়। তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার কমিটি গড়ে তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫ নবনিযুক্ত শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়। সংসদের চেয়ারম্যান ও সচিবকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তদন্ত শেষ হওয়ার পরে ৪২৩ জন নবনিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষিকাকে শোকজ করা হয়। রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তন হওয়ার পরে গত বছর স্কুল শিক্ষা দফতর একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে প্যানেলে নাম থাকা নবনিযুক্ত সব শিক্ষকেরই খাতা ফের পরীক্ষা করে দেখে। তার পরেই ফের নতুন করে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হল। জেলার কোনও কর্তা এই বিষয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “নতুন করে তদন্ত কমিটিকে জেলায় পাঠানোর সিদ্ধান্তেই সরকারের মনোভাব স্পষ্ট। কোনও রকম অস্বচ্ছতা বরদাস্ত করা হবে না। পাশাপাশি, নিরপরাধরাও যেন শাস্তির মুখে না পড়েন সেদিকটিও নিশ্চিত করতে হবে।” |