তীব্র দাবদাহে পুড়তে থাকা উত্তরবঙ্গে হালকা বৃষ্টি নিয়ে এল বিহারের ঘূর্ণাবর্ত। মঙ্গলবার দুপুরে শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে ঝড় হয়। সেই সঙ্গে চলে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। তবে তা ছিল খুবই অল্প সময়ের জন্য। বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ দমকা হাওয়া শুরু হয়। শিলিগুড়িতে ধূলো ঝড়ে নাকাল হন পথচলতি মানুষ। বহু ছোট বড় গাড়ি রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে। বিধানরোড এলাকায় রাস্তার ধারে একটি গাছ ভেঙে পড়ে এক মোটর সাইকেল আরোহী জখম হন। সেবক রোড এলাকায় ঝড়ে দোকানের সাইনবোর্ড খুলে পড়ায় ফুটপাত বন্ধ হয়ে যায়। একইভাবে বহু হোর্ডিং-র ফ্লেক্স ছিঁড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। হালকা বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি পান সাধারণ মানুষ। তবে বিকালের পর থেকে ঘনঘন লোডশেডিং-র দাপটে নাজেহাল হন শহরের বাসিন্দারা। একই ছবি ধরা পড়েছে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, রানীনগর এলাকায়। এদিন সকালে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে জানানো হয়, এদিন এবং আজ, বুধবার পাহাড়ি এলাকা সহ দার্জিলিঙ ও জলপাইগুড়ি জেলার সমতলেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির পূর্বাভাসে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে কৃষি দফতরও। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, বিহার ও লাগোয়া এলাকায় একটি ঘূর্ণাবতর্র্ তৈরি হয়েছে। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার ওপরে অবস্থান করছে। ঘূর্নাবর্তটি ক্রমশ উত্তরবঙ্গের আকাশে চলে আসায় বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এদিন সকাল থেকেই আকাশে কালো মেঘের ঘোরাফেরা থাকলেও রোদের দাবদাহ কমেনি। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, “বছরের এই সময়ে সাধারণত কোনও নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের কারণে বৃষ্টি হয়ে থাকে। গত একমাসে এই ধরণের কোনও পরিস্থিতি উত্তরবঙ্গ বা লাগোয়া এলাকায় তৈরি হয়নি। তবে বিহারে তৈরি হওয়া একটি ঘূর্ণাবর্ত গত সোমবার রাত থেকেই উত্তরবঙ্গে ঢুকতে শুরু করেছে।” |
মার্চ মাসের শুরু থেকেই উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা বাগানে যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনিই ব্যপক ক্ষতি শুরু হয়েছে পাট চাষেরও। বৃষ্টি না হওয়ায় জলপাইগুড়ি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় জমিতে পাট লাগানোই সম্ভব হয়নি বলে কৃষি দফর সূত্রে জানা গিয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলায় প্রায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে প্রতিবছর পাট চাষ হলেও এবারে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার হেক্টরের মত জমিতে পাট লাগানো হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে সাধারণত পাট লাগানো হয় না। সেই কারনেই আগামী দুই তিন সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে পাটের ফলন ব্যাপক হারে মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, অন্তত দুই থেকে তিনদিন টানা বৃষ্টি না হলে পাট চাষের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে না। জলপাইগুড়ি সদর মহকুমার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। সেখানে পাট লাগানোর মরসুম শেষ হতে চললেও এবারে ১ হাজার হেক্টর বেশি পরিমাণ জমিতে পাট লাগানো সম্ভব হয়নি। জেলার সহকারি কৃষি অধিকর্তা নবেন্দু বসাক বলেন, “পাট লাগানোর সময় বৃষ্টি অবশ্যই প্রয়োজনীয়। জমি এবং পাট দুটিকেই ভিজিয়ে নিতে হয়। চলতে থাকার দাবদহের কারণে বেশিরভাগ এলাকাতেই মাটির রস শুকিয়ে গিয়েছে। সেই কারণে কৃষকরা পাট লাগাতে পারছেন না। যাঁদের পাম্পসেট রয়েছে তাঁরা কৃত্রিমভাবে জল আনছেন। কিন্তু বেশিরভাগ কৃষকই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন।” |