পেট্রোল পাম্প থেকে ভক্তিনগর থানার দূরত্ব বড়জোর এক কিলোমিটার। রাত পাহারায় থাকে দুটি মোবাইল ভ্যান। তা সত্বেও সোমবার রাতে ওই পাম্পের সামনেই সেখানকার কর্মীকে দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়ে খুন করে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালানোয় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। মঙ্গলবার ভক্তিনগর থানার পুলিশের নজরদারির ওই হাল নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। এক ঘন্টা সেবক রোড অবরোধ করে রাখলে যানজটে নাকাল হন মানুষ। কংগ্রেসের এক কাউন্সিলর গিয়ে অবরোধ তোলার ব্যবস্থা করেন। সিপিএমের তরফেও থানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে এদিন শিলিগুড়ি ও সংলগ্ন এলাকায় পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখেন কর্মীরা। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে গাড়ি চালকদের। পেট্রোল না পাওয়ায় দুপুরের পরে অনেক গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহকুমাশাসকের দফতরের গাড়িও পেট্রোল পাম্প থেকে ফিরে যায়। পাশাপাশি এদিন সিটু ও আইএনটিইউসির তরফে ভক্তিনগর থানায় গিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। ওই দিন প্রায় মাঝরাতে ভক্তিনগর থানার সেবক রোডের দুই মাইল এলাকায় একটি পেট্রোল পাম্পের কর্মী সঞ্জয় রায়কে (৩০) গুলি করে খুন করা হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এত কাছে হওয়া সত্বেও ঘটনার আধ ঘন্টা পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন অবশ্য দাবি করেছেন, “ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই পুলিশ সেখানে যায়। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করা হয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা যাবে।” এদিন নিহতের বাড়িতে যান তৃণমূলের নেতা তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র পারিষদ কৃষ্ণ পাল। তিনি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব ঘটনার কথা শুনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানিয়েছেন। ওই পরিবারটি যাতে সমস্যায় না-পড়ে তা পেট্রল পাম্প মালিককে দেখতে হবে। সে ব্যাপারে আমরা কথা বলব।” পেট্রোল পাম্প ঘেঁষেই মালিক কুশ মিত্তলের বাড়ি। সাধারণত, প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০ টায় পেট্রল পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর পর টাকা হিসেব করে সঞ্জয় তা মালিকের বাড়িতে পৌঁছে দেন। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সাধারণত প্রতিদিন পেট্রোল পাম্পে ৫০ হাজার টাকার ব্যবসা হয়। ওই টাকা পরের দিন ব্যাঙ্কে জমা দেন পাম্পের মালিক। পুরানো বকেয়া, শনি, রবি এবং সোমবারের ব্যবসা মিলে ওই দিন রাতে পাম্পে টাকা জমা হয় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার। হিসেবের পর টাকা নিয়ে মালিকের বাড়ির দিকে রওনা হন সঞ্জয়। তখনই গলির রাস্তায় সঞ্জয়ের উপরে হামলা করে দুষ্কৃতীরা। সে সময় পাম্পে আরও ৩ জন কর্মী ছিলেন। তাঁরা বেরিয়ে আসার আগেই টাকার ব্যাগ নিয়ে সেবক রোড ধরে ভক্তিনগরের থানার দিকে বাইক নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। পাম্পের মালিক কুশবাবু বলেন, “আমি কর্মীদের কাছ থেকে যা শুনেছি তাতে একটি মোটর সাইকেলে ২ জন দুষ্কৃতী ছিল। তাঁরা গলির ভেতর থেকে বেরিয়ে মেন রোড ধরে শালুগাড়ার দিকে বেরিয়ে যায়। পরে পুলিশকে ঘটনা জানাই। এদিন ব্যবসার টাকা নিয়ে আমারই বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একটি কাজের জন্য আমি আগেই বাড়িতে চলে যাই। সঞ্জয় টাকা জমা দিতে এসে দুষ্কৃতীদের হামলার শিকার হয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই এলাকায় পেট্রোল পাম্পের পাশাপাশি একটি বড় নার্সিংহোম রয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার পরেও পুলিশের পেট্রোলিং ভ্যান ওই এলাকায় খুব একটা দেখা যায় না। পুলিশের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ভক্তিনগর থানার দুটি ভ্যান রাতে ঘুরে বেড়ায়। গত রাতে একটি ভ্যান ছিল ঘোঘোমালিতে এবং একটি ছিল প্রকাশনগরে। ওই সময়ের মধ্যে ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া ওই পেট্রোল পাম্প মালিককে রাতের দিকে টাকা নিয়ে যাওয়ার ব্যপারে সতর্ক করেছিল পুলিশ। পাম্পে সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সিসিটিভি থাকলেও গত চারদিন ধরে তা খারাপ হয়ে আছে। |