বাম ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ২৮ ফেব্রুয়ারির ধর্মঘটের দিন বিভিন্ন স্তরের অনুপস্থিত কর্মীদের বেতনে কোপ এবং চাকরির মেয়াদ ছাঁটাই চলছে। কিন্তু সে-দিন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গরহাজির শিক্ষক-কর্মচারীদের ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হল, তা এখনও অজানাই। রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরে ২ এপ্রিলের মধ্যে গরহাজির শিক্ষক-কর্মীদের বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই রিপোর্ট জমা দেয়নি। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, কবে রিপোর্ট দেওয়া হবে, তা জানায়নি কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই।
ওই ধর্মঘটে সরকারি কর্মচারীদের তো বটেই, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদেরও বাধ্যতামূলক ভাবে উপস্থিত থাকতে হবে বলে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণ ছাড়া গরহাজির শিক্ষক-কর্মীদের বেতন কাটার মতো শাস্তির মুখে পড়তে হবে। যাঁরা সেই নির্দেশ মানেননি, তাঁরা কেন ওই দিন অনুপস্থিত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখে কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল দফতর। অন্য সব সরকারি কর্মীর মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মীদেরও এক দিনের বেতন কেটে নেওয়ার কথা বলা হয়। এই রিপোর্ট দফতরে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয় সব বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এই নির্দেশের ব্যাপারে আপত্তি জানায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। সরকার এ ভাবে তাদের উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে পারে না। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরার কোনও খাতাই নেই। ধর্মঘটের দিন প্রায় সব পড়ুয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকায় কোনও ক্লাস হয়নি। এই অবস্থায় ওই দিন কোন শিক্ষক অনুপস্থিত ছিলেন, তা বোঝার উপায় নেই। তাই চাইলেও বেতন কাটার সরকারি নির্দেশ রূপায়ণ করা কঠিন।
এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী করবে? সরকারকেই বা কী বলবে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস মঙ্গলবার বলেন, “সিন্ডিকেটের বৈঠকে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এটা ইতিমধ্যে উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানান, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বেতন কাটার কোনও সংস্থান নেই। এটা সরকারকে লিখিত ভাবে জানানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এর বৈঠকে। প্রদীপবাবু বলেন, “ইসি-র আরও একটি বৈঠক ডেকে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে হবে। দ্বিতীয় বৈঠকটি এখনও হয়নি। সেটি হয়ে গেলে আমরা আমাদের বক্তব্য লিখিত ভাবে উচ্চশিক্ষা দফতরকে জানিয়ে দেব।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে গরহাজিরা সংক্রান্ত রিপোর্ট দিল না, সরকার সেই ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রিপোর্ট জমা না-দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার এখনই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কারণ, এ ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। |