সারা দিন বিজ্ঞাপনের শু্যটিং নিয়ে ব্যস্ত। বিশেষ ফটো-শু্যট হচ্ছে যেখানে তাঁকে দেখা যাবে ভারতীয় রাজার বেশে। আর কেকেআর-এর জার্সি গায়ে তিনি মানে অবধারিত ভাবে পাঁচ বছর আগে বেঙ্গালুরুতে আইপিএল উদ্বোধনী ম্যাচের সেই ১৫৮ নট আউটের স্মৃতি এসে পড়া। শাহরুখের ক্রিকেট সংসারে ফিরে আসা ব্রেন্ডন ম্যাকালাম মঙ্গলবার বাইপাসের ধারে টিম হোটেলে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন আনন্দবাজার-কে।
প্রশ্ন: কেমন লাগছে কেকেআর-এ ফেরত এসে? যেখান থেকে আপনার আইপিএল অভিযান শুরু হয়েছিল।
ম্যাকালাম: বেশ উত্তেজিত লাগছে। মাঝেমধ্যে মানুষের জীবনে খুব মজাদার সব ঘটনা ঘটে তাই না? সবথেকে ভাল লাগছে এই ব্যাপারটা ভেবে যে, এমন একটা সময় ফেরত এলাম যখন কেকেআর-এর গ্রাফটা ওপরের দিকে। গত বার খুব ভাল খেলেছে টিম। ভাগ্য আর একটু সঙ্গে থাকলে ফাইনালও খেলতে পারত। আশা করব আমিও কেকেআর-এর এই উত্তরণটায় অবদান রাখতে পারব।
প্র: আইপিএল নিয়ে কথা শুরু হল মানে অবধারিত ভাবে আপনার সেই ৭৩ বলে ১৫৮ নট আউট এসে পড়বে। সেই ইনিংস যা আইপিএলের শুরুটাই জমিয়ে দিয়েছিল।
ম্যাকালাম: আমার ওই ইনিংসটার কথা খুব একটা মনে নেই। শুধু মনে আছে খুব নার্ভাস ছিলাম। আর মনে আছে আমরা বড় স্কোর করতে পেরেছিলাম। আমি শেষ পর্যন্ত থেকে বড় ইনিংস খেলেছিলাম। অনেকগুলো ছয় মেরেছিলাম এটা মনে আছে।
কেকেআর-কে আমি আরও অনেক কিছু দিতে চাই। যাতে ব্রেন্ডন ম্যাকালাম মানে লোকে শুধু একটা ১৫৮-র স্মৃতি নিয়ে পড়ে না থাকে। |
প্র: কেকেআর মানেই কি তা হলে আপনার সঙ্গে কোথাও একটা বিশেষ সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়? ম্যাকালাম: অবশ্যই হয়ে যায়। আমি এখানে তিন বছর খেলে গিয়েছি। কেকেআর আমার পৃথিবীটাই বড় করে দিয়েছিল। আইপিএল খেলতে এসে আমি যা পরিচিতি পেয়েছি, যে রকম হোটেলে চেক-ইন করতে না করতেই লোকে অটোগ্রাফের খাতা বাড়িয়ে দেয়, যে ভাবে লোকে এসে আবদার করে একটা ছবি তুলতে চাই ভক্তদের এই ভালবাসা, এই আবেগটা আগে কখনও পাইনি। ইডেন গার্ডেন্সে কেকেআর-এর জার্সি গায়ে নেমে যে রকম পরিবেশ দেখতে পাই, পৃথিবীর অন্য কোনও মাঠে পাই না। শাহরুখ খান আমি তো ভাবতেই পারিনি কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক টিম নিয়ে এতটা মগ্ন থাকতে পারে। তা-ও আবার শাহরুখের মতো সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা এক জন সুপারস্টার!
প্র: কেকেআর-এ ফেরত আসার পর শাহরুখের বার্তা পেয়েছেন? ম্যাকালাম: না, এ বারে এখনও কথা হয়নি। কিন্তু ৫ তারিখের ম্যাচে নিশ্চয়ই দেখা হবে। আমি নিশ্চিত তখন শাহরুখ আবার সেই একই রকম এনার্জি নিয়ে টিমের সামনে উপস্থিত হবে। কেকেআর-এ সবথেকে বড় আশার প্রতীক তো শাহরুখ-ই।
প্র: বেঙ্গালুরুর নিলামে যখন আপনাকে নিয়ে প্রচণ্ড দর হাঁকাহাঁকি চলছে, সেগুলো লাইভ দেখছিলেন নাকি?
ম্যাকালাম: না, না। আমি দেখছিলাম না। পরে জানতে পারি। কেকেআর থেকেও কয়েক জনে আমাকে মেসেজ করেছিল।
প্র: কী মনে হচ্ছে? এ বারে কেকেআর-এর ভাগ্য কেমন যাবে? ম্যাকালাম: ভাল কিছু হবে বলেই আশা করছি। টিমে দারুণ স্পিরিট রয়েছে। আগের বার টিম খুব ভাল করেছে। এ বারও ভাল হওয়া উচিত।
প্র: মনোবিদে বিশ্বাস করেন? এই যে রুডি ওয়েবস্টার যোগ দিয়েছেন কেকেআর-এ তাতে কতটা উপকার হবে টিমের? ম্যাকালাম: আমার বক্তব্য হল, মনোবিদ যদি ব্যাপারটাকে সহজ-সরল রাখতে পারেন তা হলে ঠিক আছে। রুডি আমাদের খুব আকর্ষণীয় সব গল্প বলছে। দারুণ সব অভিজ্ঞতা ওর। গ্যারি সোবার্স থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় ক্রিকেটারের সঙ্গে সময় কাটিয়েছে। সে কারণেই মনে হচ্ছে ও আসায় টিমের উপকারই হবে।
প্র: গত বছর বিশ্বকাপ চলার সময় যখন ক্রাইস্টচার্চ ট্র্যাজেডি ঘটল তখন কী মনে হচ্ছিল? এত লোক মারা গেলেন ভূমিকম্পে! আপনারা তো তখন ভারতে বিশ্বকাপ খেলছেন। ম্যাকালাম: আমি তো ক্রাইস্টচার্চেই থাকি। সবথেকে অসহায় লাগছিল কারণ ভাল করে পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলতেও পারছিলাম না। ফোনের লাইন পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের ফিজিও আর ট্রেনার ফিরে গেল। ওদের ক্ষয়ক্ষতিটা বেশি ছিল। আমরা খবর পেলাম, পরিবার ঠিক আছে। আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কি না অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ খেলতে নামছি। কী সাংঘাতিক অবস্থা। এ রকম উৎকণ্ঠার মধ্যে জীবনে আর কখনও কাটাইনি। দেশে ফিরে দেখলাম মারাত্মক অবস্থা। কেউ হারিয়েছে গোটা পরিবার, কেউ নিকট আত্মীয় বা বন্ধু। সেই বিপর্যয় থেকে আমাদের শহর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়েছে হয়তো। কিন্তু ট্র্যাজেডিটা এখনও জলজ্যান্ত ভাসে চোখের সামনে। এখনও আঁতকে উঠি! |