গাঁধী কেন জাতির জনক, খুদের প্রশ্নে নীরব কেন্দ্র |
ক্লাস সিক্সের এক মেয়ের ‘ছোট্ট জিজ্ঞাসা’র উত্তর দিতে গিয়ে গলদঘর্ম প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জাতীয় মহাফেজখানা!
ঐশ্বর্যা পরাশর। বয়স ১০। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কেন্দ্রীয় তথ্য আধিকারিককে সে গত মাসে একটা চিঠি লেখে। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে যে সরকারি নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ফাদার অফ দ্য নেশন’ তথা ‘জাতির জনক’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল, তথ্যের অধিকার আইনে সেই নির্দেশেরই একটা ফোটোকপি চেয়েছিল ঐশ্বর্যা। চিঠির উত্তর দিতে গিয়ে রীতিমতো সাড়া পড়ে যায় ‘ক্ষমতার অলিন্দে’।
প্রথমেই জানিয়ে দেওয়া যাক, ঐশ্বর্যা তার উত্তর পায়নি।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঐশ্বর্যার চিঠি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আবার ‘বিষয়টা আমাদের এক্তিয়ারে নয়’ বলে যুক্তি দেখিয়ে সেটা পাঠিয়ে দেয় জাতীয় মহাফেজখানায়। শেষমেশ মহাফেজখানার সহ-অধিকর্তা জয়প্রভ রবীন্দ্রনের কাছ থেকেই চিঠির উত্তর পেয়েছে ঐশ্বর্যা।
চিঠিতে তিনি লিখেছেন“মহাফেজখানার সরকারি কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেল, যে বিষয়ে তুমি জানতে চেয়েছে, তার কোনও নির্দিষ্ট নথি নেই।”
সহ-অধিকর্তার যুক্তি, নির্দেশিকা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় তথ্য আধিকারিকের কাজ শুধু তথ্যটা তুলে ধরা, গবেষণা করা নয়। কাজেই ক্লাস সিক্সের ‘অত্যুৎসাহী’কে তাঁর পরামর্শ, “তোমার এখানে আমন্ত্রণ রইল। সরকারি নথি আর বইপত্র ঘেঁটে তুমি ব্যাপারটা নিয়ে গবেষণা করতে পার।”
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসু বিষয়টি শুনে আনন্দবাজারকে বললেন, “গাঁধীজিকে ‘বাপু’ অনেকেই বলতেন, কিন্তু ‘ফাদার অফ আওয়ার নেশন’ সম্বোধন প্রথম করেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১৯৪৪ সালের ৬ জুলাই রেঙ্গুনের স্টুডিও থেকে গাঁধীজির উদ্দেশে এক বেতার বক্তৃতায় তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর জন্য আশীর্বাদ চেয়েছিলেন নেতাজি। সেখানেই তিনি ওই সম্বোধনটি করেন।”
নেতাজির সেই বক্তৃতা থেকে সুগতবাবু যে উদ্ধৃতি দিলেন, তার বঙ্গানুবাদ করলে দাঁড়ায় ‘জাতির জনক (ফাদার অফ আওয়ার নেশন), ভারতের স্বাধীনতার এই পবিত্র লড়াইয়ে আমরা আপনার আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা চাই।’
কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ্য জানাতে অপারগ শুনে কিছুটা বিস্মিতই হলেন নেতাজির নাতি সুগতবাবু। |