বাসযাত্রীদের হুমকি দিয়ে
নামালেন অটোচালকেরা
ফুলবাগানের মোড়ে বাসটি বাঁক নেওয়ার মুখে পথ আটকায় একদল যুবক। বাসে তখন বেশ ভিড়। যুবকদের দাবি, যাঁরা বাসে বসে রয়েছেন, তাঁরা যেতে পারবেন। যাঁরা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাঁদের নেমে আসতে হবে। আবদার শুনে অবাক বাসযাত্রীরা। মঙ্গলবার সকাল তখন প্রায় সাড়ে ন’টা। যাত্রীরা অফিস কিংবা স্কুল-কলেজের পথে।
যুবকদের হুমকিতে বাস থেকে নেমে আসতে বাধ্য হন কয়েক জন। যাত্রীরা জানতে পারেন, ওই যুবকেরা আদতে অটোচালক। পুলিশের নির্দেশ, অটোতে চার জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। অটোচালকদের পাল্টা দাবি, অটো যদি অতিরিক্ত যাত্রী নিতে না-পারে, তা হলে বাসও তা নিতে পারবে না। তাই বাস থামিয়ে শুরু হয় জবরদস্তি। যাত্রীদের কয়েক জন তাঁদের বোঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। অনেকে বাস থেকে নেমেও যান। কয়েক জন দাঁতে দাঁত চেপে রয়ে যান বাসের ভিতরেই। পুলিশ পৌঁছে যাওয়ায় ফুলবাগানের সেই হল্লা অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণ আটকে থাকার পরে রওনা হয় বাস।
শহরের ছোট ছোট রুটে অটো চড়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সে রকম অনেক রুটেই এখন হাতে-গোনা কয়েকটি বাস চলে। এ দিন সকাল থেকে শহরের প্রায় প্রতিটি কোনায় ছোট ছোট রুটে অটো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন জনসাধারণ। অনেক ক্ষেত্রেই মাথার উপরে গনগনে সূর্য নিয়ে হাঁটা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও উপায় ছিল না। সেই হাঁটার দলে অফিসযাত্রীদের সঙ্গে ছিলেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া, এমনকী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরাও। শুধু অটো বন্ধ রেখেই ক্ষান্ত হননি চালকেরা। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাস থামিয়ে যাত্রীদের নেমে আসার আবদার করেছেন। পথ-অবরোধ করে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছেন শহরের স্বাভাবিক যান-চলাচল। এমনকী, স্কুলগাড়ি লক্ষ করেও অটোচালকেরা ইট ছোড়েন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক জায়গায় বাস ভাঙচুর করা হয়।
অবরোধের সঙ্গে আঙুল উঁচিয়ে শাসানিও। মঙ্গলবার, উল্টোডাঙায়।
এই নিয়ে দ্বিতীয় দিন। সোমবার দুপুরের পর থেকেই আস্তে আস্তে অটোর সংখ্যা কমতে শুরু করে শহরে। পেশায় চিকিৎসক তনুশ্রী চক্রবর্তী সোমবার সন্ধ্যায় শহরতলি থেকে ট্রেনে করে উল্টোডাঙায় এসে নামেন। তাঁর বাড়ি সল্টলেকে। অটো পাননি বলে অর্ধেক রাস্তা হেঁটেই যেতে হয়েছে। সোমবার বাড়ি ফেরার পথে সেই দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছেন অনেকেই। একই ছবি মঙ্গলবার দিনভর বহাল থেকেছে শহর জুড়ে।
উল্টোডাঙা, মানিকতলা, রুবি মোড়, তারাতলা, জোড়াবাগান, কাঁকুড়গাছি, ফুলবাগান, বেলেঘাটা, বি কে পাল অ্যাভিনিউ, বেহালা, পাতিপুকুর, দক্ষিণদাঁড়িতে সকাল থেকে অবরোধ শুরু হয়। তারাতলা মোড় আটকে যাওয়ায় আক্রা, বাটানগর, বেহালা, নিউ আলিপুর, খিদিরপুর এলাকার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। উল্টোডাঙার অবরোধে আটকে পড়েন সল্টলেক, হাতিবাগান, শোভাবাজারের দিক থেকে আসা অসংখ্য মানুষ। সল্টলেকের দুই গুরুত্বপূর্ণ মোড়, পিএনবি ও করুণাময়ীতে অবরোধের ফলে যানজট তৈরি হয়। বিধাননগরে অফিসযাত্রীরা, বিশেষত সেক্টর ফাইভ-মুখী বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা দুর্ভোগে পড়েন। অনেকেই হাঁটা পথে বা রিকশায় অফিস যান। মিনিট পাঁচ-দশেকের অবরোধ হয় হাজরা মোড়, টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোর সামনে ও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মোড়েও।
সকাল দশটায় উল্টোডাঙার সঙ্গে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কাঁকুরগাছি এবং ফুলবাগান মোড়ও। ভিআইপি রোডের দক্ষিণদাঁড়িতেও শুরু হয় অবরোধ। অভিযোগ, উল্টোডাঙার অবরোধ তুলতে গেলে একটি সিএসটিসি-র বাসের জানলার কাচ ঢিল ছুড়ে ভেঙে দেন এক বিক্ষোভকারী। আরও কয়েকটি বাস লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়েন তাঁরা। বিক্ষোভকারীদের তাড়া করে পুলিশ। উল্টোডাঙায় দাঁড়িয়ে অসহায় এক কলেজছাত্রী বলেন, “অটোচালকেরা সব বাস দাঁড় করিয়ে দিয়ে আমাদেরও বাস থেকে জোর করে নামিয়ে দিল।” ফুলবাগান মোড়ে দাঁড়িয়ে আর এক কলেজছাত্রী বলেন, “কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ পার্ট-ওয়ান পরীক্ষার ‘রেজিস্ট্রেশন’ আছে। একে অটো চলছে না, তার উপরে অবরোধ। কী করে কলেজে পৌঁছব, বুঝতে পারছি না!”
অটো বন্ধ। বাসে ওঠার মরিয়া চেষ্টা। মঙ্গলবার।
কাঁকুড়গাছিতে লাঠি উঁচিয়ে অটোচালকদের হটিয়ে দেয় পুলিশ। তার আগেই সেখানে তৃণমূল বিধায়ক পরেশ পালের সঙ্গে গণ্ডগোল বাধে অটোচালকদের। এক চালককে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে বিধায়কের বিরুদ্ধে। দক্ষিণদাঁড়িতেও বাস থামিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। পাথর ফেলে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটানোরও চেষ্টা করেন অটোচালকেরা। পাথর সরাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ করে ইট ছোড়া হয়। পুলিশ পাল্টা লাঠি চালায়। বেশ কয়েক জন অটোচালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ফুলবাগান-করুণাময়ী রুটের তৃণমূল-নিয়ন্ত্রিত অটো ইউনিয়নের নেতা মিহির ঘোষ বলেন, “ঠিক ছিল, যাত্রীদের কথা ভেবেই মঙ্গলবার সকাল থেকে অটো চালানো হবে। পাশাপাশি, পুলিশ ও আমাদের দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনাও চালিয়ে যাওয়া হবে। সকালে পাঁচটি রুটে অটো স্বাভাবিক ভাবে চলতে শুরুও করে।” কিন্তু জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ একদল যুবক এসে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। তাঁরা নিজেদের তৃণমূলের লোক বলেই পরিচয় দেন। তার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় অটো।

— নিজস্ব চিত্র


অবরোধ কখন, কোথায়
হাডকো মোড়: ৯টা ৪০ থেকে ১০টা ১০
কাঁকুড়গাছি মোড়: ৯টা ৫০ থেকে ১০টা ১৫
চেতলা সেন্ট্রাল রোড-প্যারীমোহন রায় রোড মোড়: ১০টা থেকে ১০টা ২০
রুবি হাসপাতাল মোড়: ১০টা ৫ থেকে ১০টা ৩০
বেহালা চৌরাস্তা: ১০টা ১৫ থেকে ১০টা ৩৫ এবং ১১টা ২০ থেকে ১১টা ৪০
রাসবিহারী মোড়: ১০টা ১৫ থেকে ১০টা ৫৭ (দু’দফায়)
দেশপ্রিয় পার্ক: ১১টা ৩০ থেকে ১১টা ৪৫
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.