রাজনীতির দড়ি টানাটানি থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে অবশেষে নতুন জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হতে চলেছে কুলটিতে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত দড়ির দুই প্রান্তে ছিল তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরসভা এবং সিপিএম নিয়ন্ত্রিত আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ)। দু’পক্ষের বিরোধ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।
কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের এডিডিএ-র নিয়ন্ত্রণ গিয়েছে তৃণমূলের হাতেই। ফলে, কাজিয়া মিটেছে। সম্প্রতি কুলটির ১১ নম্বর ওয়ার্ডে জলপ্রকল্পের জন্য একটি জলাধারের শিলান্যাসও হয়েছে।
কুলটি পুরসভার জন্য এই জলপ্রকল্পের অনুমোদন এসেছিল ২০০৭ সালে। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশনের (জেএনএনইউআরএম) আওতায় প্রায় ১৩৩ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। ২০১০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এত দিন কাজই শুরু হয়নি।
বিরোধ বাধে গোড়া থেকেই। প্রকল্পের কাজ দেখভাল করার জন্য এডিডিএ-কে ‘নোডাল এজেন্ট’ নিয়োগ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে এডিডিএ এবং কুলটি পুর কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিরোধ শুরু হয়। সে সময়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। নোডাল এজেন্ট হিসেবে দরপত্র ডাকা থেকে সম্পূর্ণ করার যাবতীয় দায়িত্ব এডিডিএ-ই পালন করতে চাইছিল।
কিন্তু তৃণমূল পরিচালিত কুলটি পুরসভা তার বিরোধিতায় নামে। তাদের দাবি ছিল, দরপত্র ডাকা থেকে সম্পূূর্ণ করার দায়দায়িত্ব তারাই পালন করবে। উভয় পক্ষই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। শুনানির পরে অবশ্য এডিডিএ-র পক্ষেই রায় দেন বিচারপতি। সেই রায় মনোমত না হওয়ায় কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। সেই মামলা ঝুলে থাকায় এত দিন কাজ শুরু হয়নি।
কিন্তু এর মধ্যে তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসায় পুরো সমীকরণ পাল্টে যায়। এডিডিএ-র নতুন চেয়ারম্যান হন তৃণমূলের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের নেতৃত্বে এডিডিএ এবং কুলটি পুরসভার কর্তারা আলোচনায় বসে বিবাদ মিটিয়ে নেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা তুলে নেয় কুলটি পুরসভা। এডিডিএ-ও কুলটি পুরসভার তত্ত্বাবধানে প্রকল্প রূপায়নের চাহিদা মেনে নেয়।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩৫টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহের জন্য মোট ১৭টি উচ্চ জলাধার নির্মাণ হবে। এতে উপকৃত হবেন প্রায় পাঁচ লক্ষ বাসিন্দা। কুলটির পুরপ্রধান তথা বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এডিডিএ প্রায় ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। দরপত্র ডাকা হয়েছে। জলাধার নির্মাণ ও পাইপ বিছানোর কাজ শুরু হয়েছে। আর কোনও অসুবিধা নেই।” তাপসবাবু বলেন, “দুই কর্তৃপক্ষের বিরোধের জেরে এত দিন কষ্ট পেয়েছেন মানুষ। প্রকল্পটি শেষ হলে সবারই লাভ হবে।” দু’বছরের মধ্যেই জলপ্রকল্প চালু করা যাবে বলে তাঁদের আশা। |