রোগীদের হাজার অভিযোগেও যা হয়নি, হাইকোর্টের এক কড়া মন্তব্যেই তা করে ফেলল স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি হাসপাতালে রোগীর পথ্যের দাম এক লাফে ৩৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করে দেওয়া হল। সোমবার রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিবের তরফে হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে এ কথা জানানো হয়। হলফনামা দেখার পরে অবিলম্বে সংশোধিত খাদ্য তালিকা অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে হাসপাতালের রোগীদের রান্না করা খাবার সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত।
সরকারি হাসপাতালে খাবারের দাম নিয়ে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। একদিকে খাবারের মান নিয়ে রোগীরা নিত্য অভিযোগ করেন। অন্য দিকে, সরবরাহকারী সংস্থাগুলি পাল্টা জানায়, মূল্যবৃদ্ধির যুগে ওই দামে ভাল খাবার দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সম্প্রতি আব্দুর রেজ্জাক নামে এক সরবরাহকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে বলেন, প্রাতরাশ, মধ্যাহ্ন ভোজ, সান্ধ্য জলখাবার ও নৈশভোজ সরবরাহ করার জন্য সরকার মাত্র ৩৭ টাকা দেয়। এই সামান্য টাকায় সরকার নির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী খাবার দেওয়া সম্ভব নয়। বিচারপতি সেই তালিকা দেখে রাজ্য সরকারের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, দেশের কোথায় এই দরে এই খাবার পাওয়া যায়। তালিকায় ছিল, সকালে রোগীকে একটি ডিম, পাউরুটি, এক গ্লাস দুধ ও একটি কলা দিতে হবে। দুপুরে ৪০০ গ্রাম ভাত, ডাল, একটি তরকারি ও ৫০ গ্রাম মাছ অথবা ৫০ গ্রাম ওজনের দু-টুকরো মুরগির মাংসের ঝোল দিতে হবে। সন্ধ্যায় চা, বিস্কুট বা অন্য কোনও জলখাবার। রাতে ভাত বা রুটির সঙ্গে ডাল ও দু’টি তরকারি। এই সব খাদ্যের পরিমাণ এবং সব্জিতে কত গ্রাম আলু, কত গ্রাম সব্জি-সব কিছুরই মাপ বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আবেদনকারীর বক্তব্য, সকলেই দেখছেন রোগীরা প্রকৃত অর্থে কি খাদ্য পাচ্ছেন এবং তা স্বাস্থ্যকর্তাদেরও অজানা নয়। কিন্তু তার পরেও তাঁরা চোখ বন্ধ করে রয়েছেন।
বিচারপতি রাজ্য সরকারকে বলেছিলেন, কী ভাবে বা কোন মন্ত্র বলে এত কম দামে রোগীদের এই পথ্য সরবরাহ করা সম্ভব, তা সরকারকেই জানাতে হবে। এ দিন সরকারি হলফনামায় দাম বাড়ানোর কথা বলার পাশাপাশি প্রাতরাশের খরচ ১৩ টাকা ৮২ পয়সা, দুপুরের খাবার ২১টাকা ৯ পয়সা, রাতের খাওয়া ১৩ টাকা ৬১ পয়সা ও সান্ধ্য জলখাবার ৬ টাকা ৭৫ পয়সা দরে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার্ভিস চার্জ বাবদ লাগবে ৫ টাকা ২৫ পয়সা। অর্থাৎ রোগী পিছু প্রতি দিন খাবারের জন্য বরাদ্দ হচ্ছে ৬০ টাকা ৫২ পয়সা। |