ভর্তি নিল না শহরের ৬ হাসপাতাল, রোগী ফিরল মেদিনীপুরে
সুচিকিৎসার আশায় আনা হয়েছিল কলকাতায়। শহরের ছ’টি সরকারি হাসপাতালে ঘুরেও মিলল না ঠাঁই। শেষে সঙ্কটজনক অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ফেরত নিতে হল, সেখান থেকেই ‘রেফার’ হওয়া রোগীকে। সরকারি স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর ‘এমনই’ ছবি সোমবার সামনে এল মেদিনীপুর শহরের হবিবপুরের বাসিন্দা প্রৌঢ় বরুণ দাসের অভিজ্ঞতায়।
রোগীর পরিবারের অভিযোগ, কলকাতার একের পর হাসপাতাল ‘স্থানাভাবে’র দোহাই দিয়েছে। এমনকী, কোথাও আবার রোগীর পরিবারকে বলা হয়েছে, ‘রেফার করার আগে কেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল থেকে ফোন করে জেনে নেওয়া হল না যে শয্যা খালি আছে কি না’! যা শুনে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ শুদ্ধধন বটব্যালের মন্তব্য, “এমন ফোন করার নিয়ম নেই। জরুরি মনে করেই রেফার করা হয়েছিল। ছ’-ছ’টি হাসপাতাল ফেরাল কী ভাবে, বুঝতেই পারছি না। অন্তত পর্যবেক্ষণ ওয়ার্ডেও তো ওঁকে রাখা যেতে পারত!”
আপনারা কোথা থেকে কী খুঁজে বার করেন, আপনারাই
জানেন। আপনারা আপনাদের মতো করে লিখুন।
আমাদের কোনও মন্তব্য জানতে চাইবেন না।

চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য
ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “এমন হওয়ার কথা নয়। কেন হল, বুঝতে পারছি না। আগে জানলে হয়তো কিছু একটা ব্যবস্থা করা যেত। তবে অবশ্যই খোঁজ নেব। কেন এমন হল সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষের কাছে জানতেও চাইব।” তবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, “আপনারা কোথা থেকে কী খুঁজে বার করেন, আপনারাই জানেন। আপনারা আপনাদের মতো করে লিখুন। আমাদের কোনও মন্তব্য জানতে চাইবেন না।”
স্বাস্থ্যমন্ত্রী খবর খুঁজে বার করার প্রসঙ্গ তুললেও কলকাতা শহরে চিকিৎসা করাতে এসে এ ধরনের ‘হয়রানি’ নতুন নয়। মাসখানেক আগেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’হাত ঝলসে যাওয়া বর্ধমানের এক যুবককে ভর্তি নিতে চায়নি কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতাল। পরে ওই যুবক যখন এম আর বাঙ্গুরে ভর্তি হন, তাঁর দু’টি হাত কেটে বাদ দিতে হয়।
৩০ মার্চ মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি হন বছর ছেচল্লিশের বরুণবাবু। ‘সাবডুয়াল হেমাটোমা’ চিহ্নিত হয়েছিল। নিউরো-সার্জেন পরিমল ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের সবচেয়ে বাইরের আবরণের নীচে কোনও কারণে রক্ত জমে গেলে হয় এই রোগ। এ ধরনের রোগীকে বেশি নাড়াচাড়া করা হলে, জীবনের ঝুঁকি থেকেই যায়। বরুণবাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রবিবার রাতে চিকিৎসকেরা তাঁকে কলকাতায় ‘রেফার’ করেন। এসএসকেএম অথবা নীলরতন সরকার মেডিক্যালে যাওয়ার জন্য লিখেও দেন চিকিৎসকেরা। সেই মতো সোমবার সকাল ৭টায় বরুণবাবুকে নিয়ে তাঁর দুই ভাই শেখর ও তরুণ কলকাতা রওনা দেন। প্রথমেই তাঁরা যান বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে (বিআইএন)। সেখানে তাঁদের বলা হয় ‘এসএসকেএম হয়ে আসুন। তা হলেই আমরা দেখব।’ দাদাকে নিয়ে এসএসকেএমে যান শেখর ও তরুণ। ফের বিআইএন-এ। চিকিৎসকেরা এ দফায় রোগীকে দেখলেও ফেরত পাঠিয়ে দেন এসএসকেএমেই। তারা ‘স্থানাভাবে’র যুক্তিতে ফিরিয়ে দেয় রোগীকে।
এই টানাপোড়েনে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন রোগী। স্যালাইন-সহ তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে শুইয়ে শেখরবাবুরা যান কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানেও প্রত্যাখ্যাত হয়ে একে একে আর জি কর, এনআরএস, চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল। অভিযোগ, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বত্রই জোটে হয়রানি, প্রত্যাখান। শেষে দাদার অবস্থা খারাপ হচ্ছে দেখে মেদিনীপুরে ফেরাই মনস্থ করেন শেখরবাবুরা। রাত ন’টায় সেখানে পৌঁছলে বরুণবাবুকে ফের ভর্তি করেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। দিনভর নাজেহাল শেখরবাবুর উপলব্ধি, “হাড়ে হাড়ে বুঝলাম, স্বাস্থ্য-ক্ষেত্রে পরিবর্তন মরীচিকাই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.