|
|
|
|
পরিষদের পাল্টা বন্ধ ডাকার হুমকি গুরুঙ্গদের |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বন্ধ ও পাল্টা বন্ধের হুমকির জেরে ফের অশান্তির মেঘ পাহাড়ে-সমতলে। আর সিঁদুরে সেই মেঘ দেখে নতুন করে আতঙ্কে সাধারণ মানুষ থেকে ব্যবসায়ী।
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর মধ্যে তরাই-ডুয়ার্সের অন্তর্ভুক্তির দাবি খতিয়ে দেখা নিয়ে পাহাড়-সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকায় ক্রমেই বাড়ছে অশান্তির আশঙ্কা। অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের বিরোধিতায় তরাই-ডুয়ার্সে আগামী ১০ ও ১১ এপ্রিল বন্ধের হুমকি দিয়েছে ১১টি সংগঠন। সোমবার ওই বন্ধের বিরোধিতায় রাস্তায় নামার কথা ঘোষণা করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তাদের সঙ্গে আছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ থেকে বহিষ্কৃত নেতা জন বার্লার অনুগামীরা-সহ ৩২টি সংগঠন। একই সঙ্গে এলাকায় ‘ক্ষমতা’ দেখাতে ১৮ ও ১৯ এপ্রিল তরাই-ডুয়ার্সে পাল্টা বন্ধের হুমকি দিয়েছে মোর্চা ও বার্লা গোষ্ঠী।
আদিবাসী বিকাশ পরিষদ-সহ ১১টি সংগঠনের হুঁশিয়ারি, তাদের বন্ধের বিরোধিতায় কেউ নামলে সংঘাত অনিবার্য। অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবের পক্ষে কোনও বন্ধের চেষ্টা হলেও তারা বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে। পাহাড় ও সমতলের বাসিন্দারা ফের ‘বন্ধের রাজনীতি’ শুরু হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন। পাহাড়বাসীদের তরফে অনেকেই মোর্চা নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়ে জানিয়েছেন, অতীতের লাগাতার বন্ধে অর্থনীতির যে হাল হয়েছে, তা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে তাঁরা আর ‘আত্মঘাতী’ আন্দোলনের শরিক হতে চান না। সমতলের ব্যবসায়ী-বাসিন্দা ও পর্যটন মহলও আলোচনার মাধ্যমে উপায় খোঁজার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছে।
ঘটনা হল, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমের শুরুতেই ফের তরাই-ডুয়ার্সে অস্থিরতার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ‘ট্যুর অপারেটর’দের সংগঠন। একই ভাবে বছরের প্রথম বৃষ্টির পরে যে নতুন চা পাতা তোলা হয় (ফার্স্ট ফ্লাশ), তার উৎপাদনেও বিঘ্ন ঘটবে ভেবে শঙ্কিত চা-মহল। শুধু তাই নয়, এপ্রিলে পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সের স্কুলগুলিতে সবে নতুন শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে। লাগাতার বন্ধের হুমকি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অভিভাবকেরা। তরাই-ডুয়ার্সে বন্ধ হলে পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের জনজীবনও বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা মহাকরণেও জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যের পক্ষ থেকেও আন্দোলনকারীদের বন্ধ থেকে বিরত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের পাহাড়-সমতলেও উন্নয়নের কাজে যে গতি এসেছে, তাতে বাধা দিতেই চক্রান্ত হচ্ছে। উত্তরবঙ্গকে অশান্ত করার চেষ্টা সরকার বরদাস্ত করবে না।”
বস্তুত, জিটিএ চুক্তির পরে পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কিন্তু, তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা অন্তর্ভুক্তির দাবি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন হতেই সমতলের নানা এলাকায় ক্ষোভ দানা বাঁধে। ওই কমিটি গড়ায় অশান্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা জানায় কংগ্রেস, সিপিএম-সহ সমতলের অনেক রাজনৈতিক দল, একাধিক অরাজনৈতিক সংগঠন। এরই মধ্যে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ, কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি, বাংলা ও বাংলা ভাষা বাঁচাও সমিতি-সহ ১১টি সংগঠন যৌথ মঞ্চ গড়ে ৪৮ ঘণ্টার বন্ধ ডাকে।
সিপিএমের অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাদের মতামত অগ্রাহ্য করে সমতলের কিছু অংশ জিটিএ-তে অন্তর্ভুক্তির দাবি খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে দলের রাজ্য কমিটি এক বিবৃতিতে অশান্তি এড়িয়ে শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সকলের কাছে আবেদন করেছে। এ দিন নাগরাকাটায় মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা তরাইয়ের নেতা শঙ্কর অধিকারী ও জন বার্লার উপস্থিতিতে ‘জয়েন্ট অ্যাকশন কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান হলেন জন বার্লা। তাঁর দাবি, মোর্চা ছাড়াও তরাই ডুয়ার্স বরো জনমুক্তি মোর্চা, নর্থ বেঙ্গল মহালি সমাজ, ডুয়ার্স তরাই অন্য সমুদায় মঞ্চ, ডুয়ার্স রাজপুত সমাজ-সহ ৩২টি সংগঠনের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা ১৫ এপ্রিল থেকে টানা পদযাত্রা, সমাবেশ করবে।
কমিটির ঘোষণার কঠোর বিরোধিতা করেছেন যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক তথা আদিবাসী বিকাশ পরিষদ নেতা তেজকুমার টোপ্পো ও জীবন মিত্র। তাঁরা বলেন, “ বন্ধ কী ভাবে জন বার্লারা ব্যর্থ করে, তা দেখব। সাধারণ শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ সেদিন রাস্তায় নামবেন।” পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে জানান, তিনি ৭ এপ্রিল থেকে শিলিগুড়ি-সহ সমতলের নানা এলাকায় পদযাত্রা করবেন। তাঁর বক্তব্য, “জন বার্লা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে। কিন্তু, আমাদের সংগঠনের পতাকা ব্যবহার করছে। আমরা আইনি পথে এটা আটকাব।” |
|
|
|
|
|