উর্দু ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে বিল পাশ হল সোমবার।
রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধ্বে ‘দি ওয়েস্ট বেঙ্গল অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১২’ পেশ করেন। যার উদ্দেশ্যকোনও জেলা বা মহকুমা বা ব্লক বা পুরসভায় মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি উর্দুভাষী হলে সেখানে ওই ভাষাকে সরকারি ভাষার মর্যাদা দেওয়া। শাসক ও বিরোধী পক্ষের সমস্ত বক্তাই ওই বিল সমর্থন করেন। বিল নিয়ে আলোচনার সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই উর্দুভাষী মানুষদের ওই দাবি ছিল। এত দিনে তা বাস্তবায়িত হল। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমরা সব ভাষাকেই ভালবাসি। রাজবংশী মানুষদের ভাষাকেও আমি সম্মান করি। সাঁওতালি ভাষাকে আগেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালিভাষীরা যাতে ওই ভাষার মাধ্যমেই লেখাপড়া করতে পারেন, তার জন্য অলচিকি লিপি-জানা শিক্ষক খুঁজছি। হয়তো পেতে একটু কষ্ট হচ্ছে, সময় লাগছে, কিন্তু চালু করব। হিন্দি, নেপালি, সাঁওতালি, গুরুমুখীসব ভাষাকেই মর্যাদা দিতে কাজ চলছে। মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ হয়ে গিয়েছে। পরের অধিবেশনে বাকি বিল এবং কৃষিজমি বিল আসবে।” বিভিন্ন ভাষার প্রতি নিজের শ্রদ্ধা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিধানসভায় একটি উর্দু শায়েরির দু’লাইন এবং নেপালি ভাষায় কয়েকটি শব্দ বলেন।
মুখ্যমন্ত্রীর আগে সিপিএমের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী উপেন কিস্কু উর্দুকে সরকারি ভাষা করার সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ‘সাধুবাদ’ জানানোর পাশাপাশিই দাবি করেন, যে সব জেলা বা মহকুমা বা ব্লক বা পুরসভায় ১০ শতাংশের বেশি সাঁওতালিভাষী মানুষ থাকেন, সেখানে সাঁওতালি ভাষাকেও সরকারি ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হোক। ওই মর্মে তিনি একটি সংশোধনীও আনেন। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায় তাঁর ওই দাবি পূরণের আশ্বাস থাকায় জবাবি ভাষণে পার্থবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, ওটা হচ্ছে।” উপেনবাবুর সংশোধনী খারিজ হয়ে যায়। এসইউসি-র তরুণ নস্কর বিলে তিনটি সংশোধনী এনেছিলেন। যার বক্তব্য জেলা, মহকুমা, ব্লক এবং পুরসভার সঙ্গে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকেও ওই বিলের আওতায় আনা হোক। তরুণবাবুর সংশোধনীটিও গৃহীত হয়নি।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জ অবশ্য বিল নিয়ে বক্তৃতার সময়ে দাবি করেন, “উর্দুকে সরকারি ভাষা করার জন্য ১৯৮২ সালে বামফ্রন্ট সরকারই একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল। অর্থাৎ এ ব্যাপারে বামেরা তৃণমূল-কংগ্রেস জোট সরকারের আগেই সক্রিয় হয়েছিল।” তার জবাবে রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম বলেন, “১৯৮২ সালে বিল এনেও এতদিন আলমারিতে তুলে রেখেছিলেন! আমাদের মুখ্যমন্ত্রী কোনও বিষয় অতদিন ফেলে রাখেন না!”
এদিন সভায় ২০০৩ থেকে ২০০৬— তিন অর্থবছরে বাজেট বরাদ্দের বাইরে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়। ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব’ অনুসারে বাম আমলের এই কান্ড বর্তমান সরকারকে পাশ করাতে হচ্ছে জানিয়ে একে ‘চূড়ান্ত আর্থিক বিশৃঙ্খলা’ বলে অভিহিত করেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সিপিএমের বিধায়ক ও বিধানসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের নেতৃত্বেই এই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় বিরোধীপক্ষকে সরকারপক্ষের সব সমালোচনা হজম করতে হয়েছে। সরকারি মুখ্য সচেতক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা বিরোধীদের আক্রমণ করে বলেন, আগের আমলে অর্থমন্ত্রী সরকারি অর্থ নিয়ে রীতিমতো ‘জাগলারি’ করে গিয়েছেন। শোভনদেব বলেন, “সংবিধানে বাড়তি খরচের নিদান আছে ঠিকই, কিন্তু তার হিসাব দ্রুত এজি-র কাছে পাঠিয়ে দিতে হয়। তা না-করে বাম সরকার বছরের পর বছর বাজেটের বাইরে বাড়তি খরচ করে গিয়েছে।” আনিসুর বলেন, “বাড়তি খরচ হতেই পারে। কিন্তু তার পরিমাণ যত কম হয়, তত ভাল। তাতে একটা সরকারের দক্ষতা প্রমাণ হয়।” তবে তিনি দোষ চাপান অর্থ দফতরের অফিসারদের উপর। |