লাভজনক পদে বিধায়ক, স্বীকৃতি দিতে বিল পাশ |
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হলদিয়া পেট্রোকেমের চেয়ারম্যান পদে বসার উপর আইনসভার সিলমোহর পড়ল। ১৯৫৬ সালের ‘কোম্পানি আইনে’ নথিভুক্ত কোনও সংস্থায় আর সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে বিধায়কদের থাকতে বাধা রইল না। সোমবার বিধানসভায় এই মর্মে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেচার (রিমুভাল অফ ডিসকোয়ালিফিকেশনস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১২’ নামে একটি বিল পাশ হয়।
কোনও লাভজনক পদে থাকলে বিধায়কদের সদস্যপদ বাতিল হতে পারে বলে ২০০৭ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেচার (রিমুভাল অফ ডিসকোয়ালিফিকেশন) আইন রয়েছে। তাতে ১৫১টি পদ লাভজনক ছিল না। এ দিনের বিলে বিগত আইনের উপরে একটি সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, কোম্পানি আইনে নথিভুক্ত কোনও সংস্থার চেয়ারম্যান বা ডিরেক্টর পদে বসলে সভার সদস্যদের সভ্যপদ বাতিল হবে না। যার নিরিখে সভায় সিপিএমের আনিসুর রহমান, আরএসপির ঈদ মহম্মদরা বলেন, “এই সংশোধনীর মুখ্য লক্ষ্য শিল্পমন্ত্রী পার্থবাবু হলদিয়া পেট্রোকেমের চেয়ারম্যান হওয়ার পর যেন বিপদে না-পড়েন।” পরে সভার বাইরে আনিসুর বলেন, “এতদিন যে তালিকা মেনে বিধায়কদের লাভজনক পদের বাইরে রাখা হত, নতুন সরকারের আমলে সব দুয়ার খুলে গেল। এখন থেকে যেকোনও সাধারণ সংস্থার মাথায়ও বসতে পারবেন মন্ত্রী-বিধায়কেরা। আর্থিক দুর্নীতির দরজা খুলবে।” জবাবে পার্থবাবু বলেন, “যে-সংস্থার কথা বলা হচ্ছে, সেটি বাংলার গৌরব বটে। কিন্তু সেটি এখন মোটেই লাভজনক নয়। ভবিষ্যতে বিপুল লাভজনক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০০৭-এর আইনে যে তালিকা আছে, সেটিকে ব্যাপকতর করা হল এই সংশোধনীতে।” এ দিনই ছিল বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন। উপরোক্ত বিলটি-সহ সাতটি বিল পাশ হয় এ দিন। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় আলোচনা হয় ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড রিফর্মস (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল নিয়ে। বাকি বিল দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন (এক্সেস এক্সপেন্ডিচার) বিল, দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাডভোকেটস ওয়েলফেয়ার কর্পোরেশন বিল, দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনরিটিজ কমিশন (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, এবং দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল।
|
কলেজের উন্নয়নে কেন বিধায়ক, সাফাই ব্রাত্যর |
শিক্ষায়তনকে ‘দলতন্ত্র’মুক্ত করার কথা বারবার বলছে রাজ্য সরকার। কিন্তু বিভিন্ন কলেজের পরিচালন সমিতিতে এখনও বিধায়ক প্রতিনিধি আছেন বলে বিধানসভায় জানালেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সোমবার প্রশ্নোত্তর পর্বে এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্করের প্রশ্নের জবাবে ব্রাত্য বলেন, “রাজ্যের কলেজগুলির পরিচালন সমিতিতে বিধায়ক প্রতিনিধি রয়েছেন।” তরুণবাবু জানতে চান, “ক’টি কলেজে এবং কতজন বিধায়ক রয়েছেন?” ব্রাত্য জানান, রাজ্যের ৬০০টি কলেজের মধ্যে ৪১টির পরিচালন সমিতিতে বিধায়ক প্রতিনিধি রয়েছেন এবং তাঁরা বেশির ভাগই তৃণমূলের। কয়েক জন কংগ্রেসের প্রতিনিধিও আছেন। সিপিএমের উপেন কিস্কু আছেন একটি কলেজে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরিচালন সমিতি-সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ‘রাজনীতি-মুক্ত’ রাখার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও কেন কলেজে এ ভাবে নিজেদের দলেরই প্রতিনিধি বসানো হয়েছে, তরুণবাবু তার ব্যাখ্যা চান ব্রাত্যর কাছে। বিষয়টিকে ‘দলতন্ত্র’ বলে মানতে নারাজ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “বিধায়করা যদি মনে করেন, কলেজের পরিচালন সমিতিতে তাঁরা থাকলে কলেজের উন্নয়ন হবে, তা হলে অসুবিধা কোথায়?” ব্রাত্যর এই মন্তব্যে বিধায়ক-প্রতিনিধি রাখায় সরকারের ‘সমর্থন’ রয়েছে বলেই বিধায়কদের একাংশ মনে করছেন। অনেক স্কুল শিক্ষককেই বাড়ি থেকে অনেক দূরের স্কুলে গিয়ে শিক্ষকতা করতে হয়। যাতায়াতে সুবিধা হয়, এমন জায়গায় বদলির ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকরা আবেদন জানাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অবশ্য একই বিষয় ও একই শ্রেণির শিক্ষকরা চাইলে ‘আপস বদলি’র সুবিধা পাবেন বলে শিক্ষা দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তার বাইরেও সাধারণ ভাবে সব শিক্ষকই যাতে বদলির সুযোগ পান, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে বলে ব্রাত্য জানান। তিনি বলেন, “আগামী বছর থেকে সব শিক্ষককেই বদলির সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।”
|
বায়োমেট্রিক কার্ডে হাজিরা স্বাস্থ্য ভবনে |
এত দিন ছিল শুধু হাজিরা খাতা। সোমবার থেকে স্বাস্থ্য ভবনে কর্মীদের হাজিরা নথিভুক্ত করতে চালু হল ‘বায়োমেট্রিক কার্ড’ পদ্ধতি। রাজ্যে এই প্রথম কোনও সরকারি অফিসে হাজিরা খাতার বদলে আধুনিক পদ্ধতিতে হাজিরার খতিয়ার রাখার কাজ শুরু হল। স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানান, অফিসে ঢোকার মুখে একটি যন্ত্রে কর্মীকে তাঁর তর্জনী রাখতে হবে। তাতে তাঁর নাম, পরিচয় এবং কখন অফিসে ঢুকলেন, তা রেকর্ড হয়ে যাবে। অফিস থেকে বেরোনোর সময়েও একই পদ্ধতি অনুসরণ হবে। মাসের শেষে ‘প্রিন্ট-আউট’ বার করে তা দেখে নেওয়া হবে। |